২৭তম তারাবিহর সালাতে ২৭তম পারার (সূরা যারিয়াত থেকে সূরা হাদিদ পর্যন্ত) সারসংক্ষেপ:
১. সূরা যারিয়াত (৫১)
• কিয়ামতের ঘটনা ও পুনরুত্থানের বর্ণনা।
• আল্লাহর শাস্তি থেকে অবিশ্বাসীদের পরিণতি।
• ইব্রাহিম (আ.)-এর মেহমানদারির ঘটনা ও নবীদের প্রতি আল্লাহর রহমত।
২. সূরা তূর (৫২)
• কিয়ামতের ভয়াবহতা ও জাহান্নামের শাস্তি।• মুমিনদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ।
• নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সত্যতার প্রমাণ।
• ৩. সূরা নজম (৫৩)
• নবী (সা.)-এর মিরাজের ঘটনা ও ওহীর সত্যতা।
• মূর্তিপূজার নিষেধ ও একত্ববাদের দিকনির্দেশনা।
• আল্লাহর সামনে সবাই জবাবদিহি করবে।
৪. সূরা কামার (৫৪)
• অতীত জাতিদের শাস্তির উদাহরণ (নূহ, আদ, সামুদ ইত্যাদি)।
• কুরআন সহজ করে দেওয়া হয়েছে উপদেশ গ্রহণের জন্য।
৫. সূরা রহমান (৫৫)
• আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের বর্ণনা (প্রকৃতি, মানব জীবন ইত্যাদি)। “فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ” (অতএব, তোমরা তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে?)
এই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি।
• জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ।
৬. সূরা ওয়াকিয়াহ (৫৬)
• কিয়ামতের দিন মানুষ তিন দলে বিভক্ত হবে: আস-সাবিকুন (অগ্রগামী), আসহাবুল-ইমান (ডানপন্থী) ও আসহাবুশ-শিমাল (বামপন্থী)।
• মৃত্যুর সত্যতা ও আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন।
৭. সূরা হাদিদ (৫৭)
• বিশ্বজগতে আল্লাহর মহিমা ও ক্ষমতার প্রকাশ।
• ঈমান ও সদকার গুরুত্ব।
• দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী, আখিরাতই স্থায়ী।
মূল বার্তা: এই পারায় কিয়ামত, আল্লাহর নিদর্শন, ইতিহাসের শিক্ষা ও মুমিনদের জন্য পুরস্কারের বর্ণনা রয়েছে। সৃষ্টির প্রতি গভীর চিন্তা ও আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি আহ্বান করা হয়েছে।
১ মাস সিয়াম সাধনা (রমজানের রোজা) মুসলিম উম্মাহকে যে গভীর শিক্ষা দেয়, তা পুরো বছর ধরে জীবনের বিভিন্ন দিককে প্রভাবিত করে। নিচে এর মূল শিক্ষাগুলো তুলে ধরা হলো:
১. আত্মসংযম ও তাকওয়া অর্জন
• রোজা শেখায় কীভাবে শারীরিক প্রবৃত্তি (ক্ষুধা, পিপাসা, কাম-লালসা) নিয়ন্ত্রণ করে আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে হয়।
• এই সংযম শুধু রমজানেই নয়, বরং বছরের বাকি সময়েও হারাম ও অপচয় থেকে দূরে থাকার প্রেরণা দেয়।
২. আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ
• দিনভুক না খেয়ে থাকা এই বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে যে, আল্লাহই একমাত্র রিজিকদাতা এবং তাঁর নির্দেশেই সব কিছু সম্ভব।
• এই আত্মসমর্পণের মনোভাব বছরজুড়ে ইসলামী বিধান মেনে চলার অনুপ্রেরণা যোগায়।
৩. সামাজিক দায়িত্ববোধ
• রমজানে গরিব-দুঃখীর ক্ষুধা-তৃষ্ণার অনুভূতি বুঝতে পারার মাধ্যমে সদকা ও জাকাতের গুরুত্ব বাড়ে।
• এই শিক্ষা বছরের অন্যান্য সময়েও মানবিকতা ও সম্পদ বণ্টনের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে।
৪. সময়ানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা
• সেহরি-ইফতারের সময়মান মেনে চলা, নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া—এগুলো দিনচর্চায় শৃঙ্খলা আনে।
• এই অভ্যাস জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে (কাজ, পরিবার, ইবাদত) সময় ব্যবস্থাপনায় সহায়ক হয়।
৫. কুরআন ও আধ্যাত্মিক চর্চার ধারাবাহিকতা
• রমজানে কুরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ-তাহাজ্জুদ ইত্যাদির মাধ্যমে আধ্যাত্মিকতা বৃদ্ধি পায়।
• এই অভ্যাস বছরের বাকি মাসেও ইবাদতের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে উৎসাহিত করে।
৬. ধৈর্য্য ও সংকট মোকাবিলার দক্ষতা
• দীর্ঘ সময় উপোস থাকা ধৈর্য্য শেখায়, যা জীবনের সমস্যা (আর্থিক, স্বাস্থ্য, সম্পর্ক ইত্যাদি) মোকাবিলায় সাহায্য করে।
৭. উম্মাহর ঐক্য
• বিশ্বব্যাপী মুসলিমরা একই সময়ে রোজা রাখে ও ইফতার করে, যা উম্মাহর সম্মিলিত শক্তিকে প্রকাশ করে।
• এই ঐক্যবোধ সামষ্টিক দায়িত্ব (যেমন: মুসলিম উম্মাহর সমস্যা সমাধান) পালনে প্রেরণা দেয়।
চূড়ান্ত বার্তা: রমজানের শিক্ষা কেবল “১ মাসের ইবাদত” নয়, বরং এটি একটি “ট্রেনিং প্রোগ্রাম” যা বছরের বাকি ১১ মাসের জন্য মুসলিমদের প্রস্তুত করে—জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে। যারা এই শিক্ষা ধরে রাখে, তাদের জন্য রমজান হয় স্থায়ী পরিবর্তনের সূচনা।
সর্বশেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৪:০৮
পাঠকের মন্তব্য