সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্সঃ

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় তার নিজ জেলা কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগরের সাথে ইনকিলাবের মুঠো ফোনে কথা হয় (৯ মে) সকাল ১০.১৫ টায়; তিনি ইনকিলাবকে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত কাল বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাত ৮ টার দিকে এ বিষয়ে একটি ক্ষুদে বার্তা দেয়া হয়েছে।

তিনি জানান, সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার কারণে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এছাড়া এ ঘটনায় আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের সদর থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই আজহারুল ইসলাম এবং কিশোরগঞ্জ পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) একজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এনামুল হক সাগর জানান, সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশ ত্যাগের ঘটনায় অতিরিক্ত আইজিকে (প্রশাসন) প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এর আগে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইমিগ্রেশন পুলিশের সদস্যসহ তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় পুলিশ সদরদপ্তর।

এদিকে কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। মামলার কাগজপত্র ও সকল তথ্যাদি পরের দিনই অর্থাৎ ১৫ জানুয়ারি ইমিগ্রেশনসহ সরকারের সকল দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর জানান, সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এদিকে আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার, ডিএসবি কর্মকর্তা ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের ঘটনায় কিশোরগঞ্জে সচেতন মহলসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তারা এ ঘটনাকে ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’ মনে করছেন। বিষয়টি নিয়ে অনেককেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে গণআধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ তাঁর নিজের ফেসবুকে লিখেন, “গতরাতে জুলাই আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামি দেশত্যাগ করেছেন। সেখানে প্রধান উপদেষ্টার গ্রীণ সিগন্যাল ছিলো এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সহযোগিতায় তিনি ইমিগ্রেশন পার হয়েছেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি দেশত্যাগের বিষয়ে উপর উপর মহলের নির্দেশ না থাকলে কখনো ইমিগ্রেশন পার হতে পারতো না। এখন নিরীহ কয়েকজন কর্মকতা প্রত্যাহার করে মূলত শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে সরকার।” তিনি আরো লিখেন, “ সাবেক রাষ্ট্রপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির দেশত্যাগের বিষয়ে একটা জেলার পুলিশ সুপার, একটা থানার এসআই কিংবা একজন এসবির সদস্য কতটা ভূমিকা পালন করতে পারে এটা একজন সচেতন মানুষ হলেই অনুধাবন করা যায়। অথচ আজকে রাঘববোয়ালদের রক্ষা করতে গিয়ে নিরীহ কর্মকর্তাদের শাস্তি দিয়ে মূলত জনরোষ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে সরকার। এগুলো অন্যায়….”

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিশোরগঞ্জের অন্যতম সমন্বয়ক অভি চৌধুরী ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশ ত্যাগ করেছে! গত ৭-৯ মাস তার অবস্থান কোথায় ছিলো? তার দেশত্যাগে কেন কিশোরগঞ্জের এসপিকে প্রত্যাহার করা হবে? আবদুল হামিদকে দেশত্যাগের সাথে কিশোরগঞ্জের এসপির সম্পৃক্ততা কী? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি তাহলে হাসিনার ফর্মূলাতেই পরিচালিত হচ্ছে?”

এদিকে প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ দেশত্যাগ করায় তার নিজ এলাকা কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা সদরে এ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীর। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। বৃহস্পতিবার (৮মে) রাত পৌনে ৮টার দিকে জেলার মিঠামইন সদরের উচ্চ বিদ্যালয় এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করা হয়। সমাবেশে উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীর তার বক্তব্যে বলেন, “মামলা থাকার পরও প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিনা বাধায় দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। এ ঘটনা সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ঘটানো হয়েছে। এখন সাধারণ পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এটা সরকারের নাটক; হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় জড়িত প্রকৃতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ সরকারের সবাইকে এর জন্য জবাব দিতে হবে।”

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের নয় মাস পর বুধবার (৭ মে) দিবাগত রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এযারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশ ছাড়েন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, আবদুল হামিদ শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ। নিরাপত্তার অভাবের অজুহাতে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেননি। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য বুধবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে শাহজালাল বিমানবন্দরে যান আবদুল হামিদ। পরে ইমিগ্রেশনের প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই শেষে তাকে দেশ ছাড়ার সবুজ সংকেত দেওয়া হয়।

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) ইমিগ্রেশন বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে কর্মস্থলে এসে আবদুল হামিদের দেশত্যাগের বিষয়টি জানতে পেরেছি। তিনি বিদেশ যাওয়ার কারণ হিসেবে চিকিৎসার অজুহাত দেখিয়েছেন।

গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর লতিবাবাদ এলাকার আবু তাহের ভুঞার ছেলে তহমুল ইসলাম মাজহারুল বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় নির্দেশ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এজহারে আবদুল হামিদ ছাড়াও শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সয়মা ওয়াজেদ পুতুল ও ওবায়দুল কাদেরর নাম রয়েছে।

কিন্তু তারপরও কেন আবদুল হামিদকে দেশ ত্যাগের অনুমতি দেওয়া হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে ইমিগ্রেশন পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের মামলার বিষয়টি ইমিগ্রেশন বিভাগ অবগত ছিল। কিন্তু তার বিদেশ সফরের বিষয়ে আদালত বা দুদক থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। তাই তার বিদেশযাত্রায় বাধা দেওয়া হয়নি। আর এমনিতেই আবদুল হামিদ শারীরিকভাবে অসুস্থ।”

মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও