রাজনগরে কৃষি প্রনোদনায় কৃষি অফিসারের দূর্নীতি: দোষ চাপানো হচ্ছে ইউএনও-র ওপর

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি
বিশেষ প্রতিবেদকঃ

২০২৪-২৫ অর্থ বছরে কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা খাতে আকাশমনি ও ইউক্যালিপটাস চারা ধ্বংসকল্পে উৎপাদনকারী বেসরকারী ব্যক্তি মালিকানাধীন নার্সারী মালিকদের ক্ষতিপুরণ সহায়তা/পুনর্বাসন কর্মসূচিতে উপজেলা কৃষি অফিসার অনিয়ম করে দোষ চাপাচ্ছেন ইউএনও উপর স্যোশাল মিডিয়ায়।

মৌলভীবাজার জেলায় ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা খাতে আকাশমনি ও ইউক্যালিপটাস চারা ধ্বংসকল্পে উৎপাদনকারী বেসরকারী ব্যক্তি মালিকানাধীন নার্সারী মালিকদের ক্ষতিপুরণ সহায়তা বাবদ মোট ৫ লক্ষ ৪০হাজার টাকার মধ্যে রাজনগর উপজেলায় ৫ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা ও বড়লেখা উপজেলায় ৬ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। রাজনগর উপজেলায় আরো অনেক নার্সারী থাকলেও রাজনগর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা দুরভী সন্ধিমূলকভাবে ৫টি নার্সারীতে আকাশমনি ও ইউক্যালিপটাস চারা দেখিয়ে বরাদ্দের পুরো অংশ রাজনগর উপজেলায় নিয়ে এসেছেন। রাজনগর উপজেলার রাসেল নার্সারীতে ১লক্ষ চারা দেখিয়ে ১টি নার্সারীর নামে বরাদ্দ এনেছেন ৪ লক্ষ টাকা। অথচ সরেজমিন তদন্তে দেখা যায়, উক্ত রাসেল নার্সারীতে ৪ লক্ষ চারার ধারণ ক্ষমতা নেই। উল্লিখিত রাসেল নার্সারীর মালিক শ্যামা মিয়া উপজেলা নার্সারী মালিক সমিতির সভাপতি ও কৃষি অফিসারের সকল কাজ করে থাকেন। অনুসন্ধানে এই কার্যক্রমের শুরু থেকে কৃষি অফিসারের অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, রাজনগর উপজেলায় সোনার বাংলা নার্সারীতে ৩ হাজার চারার বিপরীতে ১২হাজার টাকা, বনফুল নার্সারীতে ৬ হাজার চারার বিপরীতে ২৪হাজার, ইমন নার্সারীতে ২৩ হাজার চারার বিপরীতে ৯২হাজার টাকা, সালাম নার্সারীতে ১ হাজার ৫শত চারার বিপরীতে ৬হাজার টাকা, রাসেল নার্সারীতে ১ লক্ষ চারার বিপরীতে ৪ লক্ষ টাকাসহ মোট ৫ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা প্রনোদনা প্রদান করা হয়েছে। মৌলভীবাজার জেলাসহ রাজনগর উপজেলায় আরো অনেক নার্সারীতে আকাশমনি ও ইউক্যালিপটাস চারা রয়েছে। অথচ বরাদ্দের পুরো টাকা একটি উপজেলার ৫টি নার্সারীতে দেয়া হয়েছে। এতে কৃষি বিভাগের যোগসাজসে অনিয়ম করা হয়েছে। রাজনগর উপজেলার অন্যান্য নার্সারী মালিকরা বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখছেন।

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসারের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে সকল নার্সারীর নামে বরাদ্দ এসেছে সেসকল নার্সারী মালিকদের চেক হস্তান্তন করা হয়েছে। নার্সারীর মালিকরা চেক বুঝে পেয়েছেন ও সবার স্বাক্ষরিত চেক বই ও খাতায় রয়েছে। চেক হস্তান্তরের বিষয়ে তার জানা নেই মর্মে ইতোপূর্বে তিনি একটি বক্তব্য দিয়েছেন মর্মে জানতে চাইলে কৃষি অফিসার জানান ইতোপূর্বে কারো কাছে তিনি কোন বক্তব্য দেন নাই বলে প্রতিবাদ জানান।

এবিষয়ে জানতে চাইলে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আফরোজা হাবিব এর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসার কি বলেছেন ও কেন বলেছেন তার ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারবেন। কৃষি পুনর্বাসন ও বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে বরাদ্দকৃত অর্থের পত্র পাওয়ার পর বরাদ্দকৃত অর্থ সংশ্লিষ্ট নার্সারী মালিকদের প্রনোদনা হিসেবে প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সহকারী ও উপজেলা কৃষি অফিসার চেকপ্রস্তুতক্রমে আমার নিকট নথি উপস্থাপন করেছেন। কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে উপজেলা কৃষি অফিসারের মাধ্যমে নার্সারী মালিকদের চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, সকল ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য  উপজেলায় অনেক কমিটি রয়েছে। কমিটির সদস্য সচিবগণ কাজ বাস্তবায়ন করে থাকেন। সে মোতাবেক উপজেলা কৃষি পুনর্বাসন ও বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে উপজেলা কৃষি অফিসার যথানিয়মে সংশ্লিষ্ট ৫টি নার্সারীর মালিকদের কাছে হস্তান্তর করেছেন ও চেক হস্তান্তরের প্রমানক হিসেবে তিনি চেক বিতরণের রেজিস্ট্রার এবং চেকের মুড়াবহিতে চেকগ্রহণকারীর স্বাক্ষরসহ মুড়াবহি: ও মাস্টাররোল দাখিল করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কৃষি অফিসারের বক্তব্য পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, এই প্রকল্পের শুরু থেকে রাজনগর উপজেলা কৃষি অফিসার এবং সংশ্লিষ্ট নার্সারী মালিকরা মিলে অনিয়মের মাধ্যমে সরকারী টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলায় ব্যাপক জানা-জানি হলে উপজেলা কৃষি অফিসার টাকা আত্মসাত করতে না পেরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এর উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও