জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪

অবশেষে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি কংগ্রেসের

উগ্র ট্রাম্প সমর্থকদের তা-বের কয়েক ঘণ্টার মাথায় অবশেষে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেনের বিজয়কে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে
উগ্র ট্রাম্প সমর্থকদের তা-বের কয়েক ঘণ্টার মাথায় অবশেষে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেনের বিজয়কে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেস্ক :

উগ্র ট্রাম্প সমর্থকদের তা-বের কয়েক ঘণ্টার মাথায় অবশেষে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেনের বিজয়কে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। আগামী ২০ জানুয়ারি তাকে শপথ গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসে জো বাইডেনকে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন দেশটির আইনপ্রণেতারা। গত বুধবার দিনের শুরুতে ক্যাপিটল হিলে দেশের ২০৬ বছরের ইতিহাসে ন্যক্কারজনক হামলা চালায় প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা। এ সময় সেখানে কংগ্রেসের অধিবেশনে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। 

বিক্ষোভের নামে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের আগ্রাসী তা-বে এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটন ডিসি ও পার্শ্ববর্তী অঙ্গরাজ্য ভার্জিনিয়ায় কারফিউ জারি করা হয়। এছাড়া, শহরজুড়ে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়। শহরে ১৫ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বাউজার। সহিংসতার শুরুতেই পুলিশের গুলীতে এক নারী নিহত হন। পরে মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় আহত আরও তিনজনের মৃত্য হয়। বাইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনুমোদন দেয়ার কথা ছিল এতে। কিন্তু ট্রাম্পের উস্কানিতে তার সমর্থকদের হামলায় প্রথম দফায় তা ভেস্তে যায়। সিনেটররা সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচান। পরে আবার অধিবেশন বসে। তাতেই বাইডেনকে দেশের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট চূড়ান্ত করা হয়েছে। ফলে তার সামনে এখন আর কোনোই বাধা রইল না। আগামী ২০ শে জানুয়ারি তিনি শপথ নেবেন। ব্রেকিং হিসেবে এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন, বিবিসির ও ফক্স নিউজ।

ক্যাপিটল ভবনে হামলার ওই ঘটনার ২০৬ বছর পর ২০২১ সালের শুরুতেই এমন সহিংস ঘটনার জন্ম দিল মার্কিনিরা। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সেই সঙ্গে দেশটির দুই প্রধান দলের একাধিক শীর্ষ ব্যক্তি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। বিশ্বনেতারাও এর সমালোচনা করেছেন, করছেন। এ ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে বিশ্বজুড়ে। কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে যখন নতুন প্রেসিডেন্টকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকরা এমন হামলা চালালো। এর আগে জর্জিয়ায় সিনেট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির দুই প্রার্থী হেরে যান। এ অবস্থায় পাল্টে গেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও। তিনি বলেছেন, তিনি আর ভোটারদের রায় উল্টে দেয়ার চেষ্টা করবেন না। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেনের বিজয় নিশ্চিত করেছেন তিনি। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অতি ঘনিষ্ঠ সিনেট সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা মিশ ম্যাকনেল গত বুধবার ক্যাপিটল হিলের ঘটনাকে ব্যর্থ বিদ্রোহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, যারা আমাদের গণতন্ত্রকে বিঘিœত করার চেষ্টা করেছে তারা সফল হতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রে নজিরবিহীন হামলায় হতাশ কর্মকর্তাদের পদত্যাগ ক্যাপিটলে হামলা এবং বিক্ষোভকারীদের উসকানি দেওয়ায় হতাশ হয়ে পদত্যাগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজর ম্যাথিউ পটিঙ্গার।

গত বুধবার আইন প্রণেতারা যখন নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করার জন্য অধিবেশনে বসেছিলেন ঠিক সে সময়েই ট্রাম্পের শত শত সমর্থক দেশটির আইনসভা কংগ্রেস ভবনে ঢুকে সহিংসতা চালায়। এই হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে কারফিউ ভঙ্গ করার দায়ে। ১৮১২ সালে যুদ্ধের পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন এমন আগ্রাসনের সাক্ষী হলো। এমন অস্থিরতার মধ্যে পড়তে হবে সেটা জো বাইডেন হয়তো কল্পনাও করেননি। নির্বাচনের পর থেকেই একের পর এক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে বাইডেনকে। গত ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে জয় নিশ্চিত করেন তিনি।

অপরদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২টি ভোট। তবে ফলাফল নিশ্চিত হওয়ার পরও নিজেকে পরাজিত মানতে নারাজ ছিলেন ট্রাম্প। এমনকি তিনি বাইডেনের জয়ী হওয়ার বিষয়টিও মেনে নিতে পারেননি। তার অভিযোগ, নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি করে তাকে হারিয়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে, হামলার ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে নিরাপত্তা বাহিনী। কয়েক ঘণ্টা অধিবেশন বন্ধ থাকার পর আবারও তা পুনরায় শুরু করেন আইনপ্রণেতারা। এরপর প্রথা অনুযায়ী, জো বাইডেনকে দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিপার্টমেন্টের প্রধান রবার্ট কন্টি জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুটি পাইপ বোমা ও এক কন্টেইনার ভর্তি পেট্রোল বোমা উদ্ধার করেছে। এখন পর্যন্ত ৫২ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে যাদের অধিকাংশই কারফিউ ভাঙার দায়ে গ্রেফতার হয়েছেন। পার্লামেন্ট ভবনে সহিংসতার বিষয়ে ওয়াশিংটনের মেয়র মুরিয়েল বাউজার বলেন, অনেকেই অস্ত্রসহ এখানে সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞে অংশ নিতে এসেছে। তারা অস্ত্রের পাশাপাশি রাসায়নিক দ্রব্য, ইট এবং বোতলও নিক্ষেপ করেছেন। এদিকে পার্লামেন্ট ভবনে নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় হোয়াইট হাউসের তিন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া আরও কয়েকজন পদত্যাগ করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সারাহ ম্যাথিউস, সোশ্যাল সেক্রেটারি রিকি নিকেটা ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের চিফ অফ স্টাফ স্টেফানি গ্রিশ্যাম বুধবার রাতে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

এক বিবৃতিতে সারাহ ম্যাথিউস বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনে সেবা দিতে পেরে এবং যে নীতিগুলো আমরা গ্রহণ করেছি তাতে আমি গর্বিত। তিনি আরও বলেন, আজ আমি যা দেখেছি তাতে আমি ভীষণভাবে বিরক্ত। আমি আমার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি যা এই মুহূর্ত থেকে কার্যকর হবে। আমাদের জাতির একটি শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর প্রয়োজন। ইউএস ক্যাপিটল হিস্টোরিকাল সোসাইটির বিশেষজ্ঞদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এর আগে ১৮১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে যুদ্ধ চলাকালে এমন হামলা হয়েছিল।  ওয়ার অব ১৮১২ নামে পরিচিতি যুক্তরাষ্ট্র ও তার বন্ধুদের সঙ্গে ব্রিটিশ বাহিনীর ওই যুদ্ধ শুরু হয় ১৮১২ সালের জুনে; শেষ হয় ১৮১৫ সালে। ওই যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ বাহিনী হামলা করেছিল। ইউএস ক্যাপিটল হিস্ট্রি সোসাইটির বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি। ১৮১২ সালে যুদ্ধের পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন এমন আগ্রাসনের সাক্ষী হলো। ১৮১৪ সালে ওয়াশিংটনে অভিযান চালানের সময় ভাইস অ্যাডমিরাল স্যার আলেক্সান্ডার ককবার্ন ও মেজর জেনারেল রবার্ট রোসের নেতৃত্বে নির্মাণাধীন ক্যাপিটল ভবনে আগুন জালিয়ে দেয় ব্রিটিশ বাহিনী। তবে প্রবল বর্ষণের কারণে সে যাত্রায় ওই ভবনটি বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যায়। ইউএস ক্যাপিটল হিস্টোরিকাল সোসাইটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পার্লামেন্ট ভবন শুধুমাত্র একটি অবকাঠামো নয়। এটি তার চেয়েও অনেক বেশি কিছু। এটি আমেরিকার গণতন্ত্র এবং আমাদের জীবন-যাপনের মূর্ত প্রতীক।

এদিনের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। অধিবেশনে বিষয়টি উত্থাপিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মন্টানার সিনেটর স্টিভ ডেইনস, ইন্ডিয়ানার মাইক ব্রাউন এবং জর্জিয়ার কেলি লোফ্লারসহ অন্যরা জানান, তারা আর বাইডেনের জয়ের বিষয়ে আপত্তি করবেন না। তবে কিছু রিপাবলিকান সদস্য অ্যারিজোনার ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে, যেখানে বাইডেন সামান্য ব্যবধানে জিতেছিলেন। শেষ পর্যন্ত সিনেটে সংখ্যালঘু ডেমোক্র্যাটিক ব্লকে অনেক রিপাবলিকান সদস্য যোগ দেন; যারা বাইডেনের বিজয় মেনে নেন।

বাইডেন কংগ্রেসের অনুমোদন পাওয়ার পর এক বিবৃতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করলেও ঘটনা হলো আমাকে সরে যেতে হবে , যা কিছুই হোক আগামী ২০ জানুয়ারি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। নির্বাচনে জালিয়াতির ভিত্তিহীন অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে ট্রাম্প আরও বলেন, আমি সবসময়ই বলে এসেছি, কেবল বৈধ ভোট গণনা করতে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। প্রেসিডেন্টের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে মহান প্রথম মেয়াদ হলেও এটি আমাদের মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন লড়াইয়ের কেবল শুরু।

উল্লেখ্য, গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের বিজয় অনুমোদনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা বুধবার কংগ্রেসের এক যৌথ অধিবেশনে বসেন। উভয় কক্ষের এই অধিবেশনে পপুলার ভোটের ভিত্তিতে ইলেকটোরাল কলেজের দেওয়া ভোটগুলো গোনা হয় এবং তা চূড়ান্তভাবে প্রত্যয়ন করা হয়। অধিবেশনের কয়েক ঘন্টা আগেই এর বিরোধিতা করে ওয়াশিংটনে জড়ো হন কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক, যাদের মধ্যে উগ্রপন্থি বিভিন্ন গ্রুপের সদস্যরাও ছিলেন। সেই সমাবেশের বক্তব্যে নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজয় মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এরপরই বেশ কিছু ট্রাম্প সমর্থক পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়ে তা-ব শুরু করে। নজিরবিহীন এই তা-বের ঘটনায় এক নারীসহ চার জন নিহত হয়।

সর্বশেষ আপডেট: ৮ জানুয়ারী ২০২১, ০০:০৯
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও