জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪

উপকূলের জেলেদের মন ভালো নেই

উপকূলের জেলেদের মন ভালো নেই
উপকূলের জেলেদের মন ভালো নেই
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেস্ক :

৬৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও সাগরে মাছ শিকারে যেতে না পারায় মন খারাপ কক্সবাজার উপকূলের জেলেদের। ফলে নোঙর করা শত শত ট্রলারে কয়েক হাজার মাছ শিকারি অলস বসে রয়েছেন। শনিবার (২৪ জুলাই) কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীরে এই চিত্র দেখা যায়।

জানা যায়, দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সামুদ্রিক মৎস্য আইন, ২০২০ এর ধারা ৩ এর উপধারা ২ এর ক্ষমতাবলে গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরার নিষিদ্ধ ছিল। ২০ মে আগেই এই নিষেধাজ্ঞার প্রজ্ঞাপন জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ফলে শুক্রবার (২৩ জুলাই) মধ্যরাত থেকে এই নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। যার জন্য সাগরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল জেলেরা।

কক্সবাজার বাঁকখালী নদীস্থ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাট। এই ঘাটে নোঙর করা রয়েছে বেশ কিছু ট্রলার। তারমধ্যে সাগরে যাবার জন্য রওনা হয়েছিল এফবি মা-বাবার দোয়া। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে আর সাগরে যাওয়া হয়নি এই ট্রলারের ১৬ জন জেলের।

কথা হয় ওই ট্রলারের জেলে রহিম উল্লাহ (৪৪) এর সঙ্গে। তিনি বলেন, ভাই মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। দীর্ঘ ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে যখন সাগরে যাচ্ছি, তখনই ৩ নম্বর সংকেত। আর সাগর নাকি খুবই উত্তাল। এখন আর করার কিছু নেই। দেখি দুই-এক দিনের মধ্যে সংকেত উঠিয়ে ফেললে ও সাগর স্বাভাবিক হলে সাগরে মাছ শিকারে যাব।

শুধু রহিম উল্লাহ নন; বাঁকখালী নদীতে নোঙর করা ট্রলারে অলস বসে থাকা সব জেলেরই একই কথা।

এদিকে শুক্রবার মধ্যরাতে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বেশকিছু ট্রলার সাগরে যায়। কিন্তু হঠাৎ ৩ নম্বর সংকেত ও উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে দুটি ট্রলার দুর্ঘটনায় কবলিত। তবে কেউ হতাহত না হলেও বাকিগুলো ট্রলারগুলো মাছ শিকার না করে নিরাপদে উপকূলে ফিরে আসে।

কথা হয় সাগর থেকে ফিরে আসা এফবি খাজা আজমির ট্রলারের জেলেদের সঙ্গে। তারা বলেন, শুক্রবার মধ্যরাতে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর সাগরে গিয়েছিলাম। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারেনি। নাজিরারটেক মোহনা পর্যন্ত যাওয়ার পর পুনরায় এখন বাঁকখালী নদীর উপকূলে ফিরে এলাম। কারণ উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে উল্টে দুটি ট্রলার দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে। ফলে জীবনের ঝুঁকি না নিয়ে উপকূলে চলে আসলাম।

রবিউল আলম নামের এক জেলে বলেন, নাজিরারটেক উপকূলের কাছাকাছি দুটি ট্রলার দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি। পরবর্তী ট্রলারগুলো উদ্ধার করে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের বিপরীতে খুরুশকুল উপকূলের ঘাটে রাখা হয়েছে।

শনিবার (২৪ জুলাই) সকালে সরজমিনে দেখা যায়; ‘তুমুল বৃষ্টি; বৃষ্টিতে ভিজছে ট্রলারে থাকা অনেক জেলে। কিন্তু বৃষ্টি একটু কমলেই ছোট ডিঙি নৌকাযোগে জেলেরা ছুটে আসছেন নিরাপদ আশ্রয়ে। আবার সাগরে যাওয়া অনেক ট্রলারও ফিরছে উপকূলে। তবে জেলেরা বলছেন; দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে সাগরে যাবেন না তারা।’

এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি ইলিয়াছ মিয়া বলেন, এই ট্রলারে ১২ জন জেলে রয়েছে। সাগরের যে অবস্থা ও যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে এই মুহূর্তে সাগরে যাওয়া যাবে না। আমি ১২ জন জেলের জীবনের ঝুঁকি নিতে পারব না। বিষয়টি ট্রলার মালিককে জানিয়ে দিয়েছি। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কেটে গেলেই তারপর সাগরে মাছ শিকারে যাব।

সকাল ৭টা; কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। দীর্ঘদিন পর নিষেধাজ্ঞা কেটেছে; তাই সকাল না হতেই মাছ আসবে তাই পল্টুনে ছুটে আসেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। কিন্তু দেখা নেই মাছের; তাই কিছুটা হতাশ তারাও।

শহরের নুনিয়ারছড়ার মৎস্য ব্যবসায়ী আলমগীর বলেন, মনে করেছিলাম সকালে কিছু ট্রলার মাছ নিয়ে অবতরণ কেন্দ্রে ফিরবে। কিন্তু তা আর হলো না। ৬৫ দিনের বন্ধের সময় ট্রলারগুলো যে অবস্থায় বাঁকখালী নদীতে পড়েছিল; ঠিক এখনো একই অবস্থা পড়ে আছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আর অবতরণ কেন্দ্রে মাছে দেখা মিলবে না।

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মার্কেটিং অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, দুটি ট্রলারের দুর্ঘটনা খবর পেয়েছি। আর অনেকগুলো ট্রলার শুক্রবার মধ্যরাতে সাগরে গিয়ে শনিবার ভোরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মাছ শিকার না করে উপকূলে ফিরে এসেছে। সুতরাং; এখন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র মাছশূন্য। আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার সাগরে জেলেরা মাছ গেলে আগামী সপ্তাহখানেক মধ্যে অবতরণ কেন্দ্রে মাছে অবতরণ হবে বলে আশা করছি।

উল্লেখ্য, কক্সবাজারে ছোট-বড় ৮ হাজারের বেশি মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকা রয়েছে। এসব ট্রলার ও নৌকায় মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে লক্ষাধিক জেলে।

সর্বশেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২১, ১১:৪৮
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও