বাংলাদেশ সফরে ব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন মার্কিন দুই কংগ্রেসম্যান। গতকাল রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন তারা। এরপর নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বসেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট দলের দুই কংগ্রেসম্যান। এসব বৈঠকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিতে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে বিএনপির সরকার পতনের দাবির সঙ্গে সমঝোতার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিএনপিও তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কথা জানিয়েছে জাতীয় পার্টি।
রবিবার বিকেলে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাসভবনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিদের সঙ্গে চা-চক্র ও বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের জর্জিয়ার কংগ্রেসম্যান রিচার্ড ম্যাককোরমিক এবং হাওয়াইয়ের ডেমোক্র্যাট দলের কংগ্রেসম্যান এডওয়ার্ড কেইস।
এ বৈঠকে অংশ নেন আওয়ামী লীগের তিন এমপি নাহিম রাজ্জাক, ওয়াশিকা আয়েশা খান ও তামান্না নুসরাত (বুবলী), বিএনপির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশিদ, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরিফা কাদের এমপি, মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল ও নাজমা আক্তার।
এ সময় পিটার হাস ছাড়াও মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক ও শ্রমবিষয়ক কর্মকর্তা ম্যাথিউ বেহ এবং উপ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকবিষয়ক কর্মকর্তা আর্তুরো হিনেস উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির পক্ষ থেকে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না উল্লেখ করে তাঁদের দলের অবস্থান তুলে ধরেন। একই সঙ্গে দলটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলেও ওই বৈঠকে জানান তিনি। তাঁর অভিযোগ ছিল, দেশে এক ব্যক্তির শাসন চলছে।
বৈঠক শেষে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি সাংবাদিকদের বলেন, কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে বৈঠকে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নির্বাচনী পরিবেশ ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের নিরপেক্ষ কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের দাবির কথা জানিয়েছি। এটাও বলেছি, একদলীয় শাসনের অধীনে গত দুটি নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হয়েছে। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে আশাবাদী জানিয়েছি। তারা জানতে চেয়েছিল বলেই এসব কথা হয়েছে বলে জানান এই বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, কেন আজকে এক দফা দাবির আন্দোলনে নামতে হয়েছে, এর প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো বিধান রাখা সম্ভব নয়। সূত্র জানায়, বৈঠকে কংগ্রেসম্যান এড কেইস আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলকে বলেন, শুধু তোমাদের দেশে নয়, সারা পৃথিবীর কাছে অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে। জবাবে আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ হিসেবে তাঁদের আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান। একই সঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির কথা জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব কী কারণে, সেই বিষয়টি তুলে ধরেন দুই কংগ্রেসম্যান। এর মধ্যে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ইন্দো-প্যাসিফিকে অঞ্চলে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, একই সঙ্গে বাংলাদেশের জনসংখ্যা। সারা পৃথিবীতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা কমে যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যেন গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকে, সেটা চায় আমেরিকা।
আইনের মাধ্যমে সরকার নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করেছে বলে মার্কিন প্রতিনিধিদলকে জানান আওয়ামী লীগের এক সদস্য। তিনি আরও বলেন, সামনের অধিবেশনে আরেকটি আইন আসবে। সেখানে নির্বাচনের সময়ে বিশৃঙ্খলা করা বা বাধা দেওয়ার ক্ষেত্রে শাস্তির বিধান রাখা হবে।
শেরিফা কাদের জানান, বৈঠকে কংগ্রেসম্যানরা সার্বিক নির্বাচনী পরিস্থিতি ও পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তারাও বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানিয়েছেন। আমরা আমাদের মতো করে বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছি। সেইসঙ্গে বলেছি, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিবে।
নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক: রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর দুই কংগ্রেসম্যান ম্যাককোরমিক ও কেইস পিটার হাসের বাসভবনে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে অংশ নেন সুশাসনের জন্য নাগরিক সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী প্রধান ও পরিবেশকর্মী ড. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বিআইপিএসএসের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনিরুজ্জামান, সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির প্রতিষ্ঠাতা, নির্বাহী পরিচালক ও শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আখতার, সেন্টার ফর গর্ভনেন্স স্ট্যাডিজের (সিজিএস) নির্বাহী পরিচালক ও চ্যানেল আই’র তৃতীয় মাত্রার সঞ্চালক জিল্লুর রহমান, আলোকচিত্র শিল্পী শহিদুল আলম, নারীনেত্রী শিরিন হক এবং আর্টিকেল নাইন্টিনের আঞ্চলিক পরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া) ফারুক ফয়সাল। এর আগে দুই কংগ্রেসম্যান গত শনিবার প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে আসেন। গতকাল রোববার সকালে তারা রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। এসময় তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। আজ সোমবার তারা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন।














পাঠকের মন্তব্য