জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪

গাজার হাসপাতালে জায়গা নেই ফ্রিজে রাখা হচ্ছে লাশ

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্স :

গাজার হাসপাতালগুলোর মর্গে আর জায়গা নেই, তাই ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের লাশগুলো আইসক্রিম ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, গাজা শহর থেকে পালিয়ে আসা কনভয়গুলিতে ইসরাইলি বিমান হামলায় মহিলা ও শিশু সহ গত ২৪ ঘন্টায় ৩২০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

শেষ খবর পাওয়া অবধি, গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় অন্তত ২,২১৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৮,৭১৪ জন আহত হয়েছে। ইসরাইলে নিহতের সংখ্যা ১,৩০০ ছুঁয়েছে, ৩,৪০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরে, গত সপ্তাহে ইসরাইলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে। এক হাজারেরও বেশি আহত এবং শতাধিক গ্রেপ্তার হয়েছেন।

স্থল অভিযান শুরু : গাজায় ইসরাইলের পদাতিক বাহিনী ট্যাংকের ছত্রছায়ায় স্থল অভিযান শুরু হয়েছে। হামাস যোদ্ধাদের ‘নির্মূল’ করাই এই অভিযানের মূল লক্ষ্য। শুক্রবার ইসরাইলের সেনাদের পদাতিক বাহিনী ও ট্যাংক গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করেছে। একে প্রতিশোধ অভিযানের শুরু বলে জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। টানা এক সপ্তাহ ধরে ভারি বোমাবর্ষণের পর এই প্রথম স্থল অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। গাজা ভূখ-ের উত্তরাংশের ১১ লাখ বাসিন্দাকে সরে যেতে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় ইসরাইল। সেসঙ্গে সীমান্তে ট্যাংকের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক সেনা সমাবেশ করা হচ্ছিল। ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, আগামী দিনগুলোতে তারা গাজা শহরে ‘উল্লেখযোগ্য’ অভিযান চালাবে। পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত বেসামরিক নাগরিকরা ফিরে আসতে পারবেন না। ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি রকেট ক্রুদের ওপর হামলা চালাতে এবং হামাসের হাতে জিম্মিদের অবস্থানের তথ্য জানতে ইসরাইলি সেনারা ট্যাঙ্কের সাহায্যে অভিযান চালিয়েছে।’

আশ্রয়কেন্দ্র নিরাপদ নয়, পানিও ফুরিয়ে যাচ্ছে : ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা বলেছে যে, গাজায় তাদের আশ্রয়কেন্দ্রগুলি ‘আর নিরাপদ নয়’। পাশাপাশি অবরুদ্ধ ছিটমহলের বাসিন্দাদের জন্য খাবার পানিও শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে তারা সতর্ক করে দিয়েছে। ফিলিস্তিনি ওয়াফা বার্তা সংস্থার একজন সংবাদদাতা জানিয়েছেন যে, ইসরাইলি বাহিনী গাজা শহরের তাল আল-হাওয়া পাড়া এবং রেড ক্রিসেন্টের আল-কুদস হাসপাতালকে লক্ষ্যবস্তু করেছে যেখানে শত শত পরিবার ইসরাইলি বোমা হামলা থেকে সুরক্ষার জন্য আশ্রয় নিয়েছে। বোমা হামলায় পুরো উপত্যকা জুড়ে কয়েক ডজন বাড়িঘর এবং আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়েছে, ওয়াফা রিপোর্ট করেছে। এতে বলা হয়, হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত নাসের এবং আবু ইউসুফ আল-নাজ্জার হাসপাতালগুলো আর আহতদের সাহায্য করতে পারছে না।

গাজার হাসপাতালগুলো খালি করা ‘অসম্ভব’ : রোগীদের এবং স্বাস্থ্যসেবার ক্রমাগত প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে উত্তর গাজা উপত্যকার একটি হাসপাতালের চিকিৎসকরা হাসপাতাল খালি করতে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর আদেশ প্রত্যাখ্যান করেছেন। উত্তর গাজার জাবালিয়ার আল-আওদা হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান আহমেদ মুহান্না আনাদোলু নিউজ এজেন্সিকে বলেছেন, ‘শুক্রবার ইসরাইলি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে হাসপাতালটি খালি করার জন্য আমি একটি ফোন পেয়েছি। কিন্তু এটা সম্ভব না।’ ‘কিছু রোগীকে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল, কিন্তু কিছু রোগীকে তাদের গুরুতর অবস্থার কারণে স্থানান্তর করা সম্ভব না,’ তিনি বলেন, হাসপাতালটি পাঁচজন রোগীর জন্য নিবিড় চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। ‘৩৫ জন ডাক্তার এবং চিকিৎসা সহায়ক সহ হাসপাতালের কর্মীরা রোগীদের থাকার এবং স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ,’ তিনি বলেছিলেন।

উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাংবাদিকদের হত্যা করছে ইসরাইল : শুক্রবার দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলি হামলায় অন্তত একজন সাংবাদিক নিহত এবং আল জাজিরার দুই সাংবাদিক সহ ছয়জন আহত হয়েছেন। এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)। শনিবার এক বিবৃতিতে আরএসএফের মুখপাত্র জোনাথন দাঘের বলেছেন, ‘তাদের (সাংবাদিকদের) আশেপাশে আর কেউ ছিল না, কোনও লড়াই ছিল না, কোনও সামরিক পয়েন্ট ছিল না।’ ‘আমাদের কাছে যে তথ্যগুলি রয়েছে তা একটি উদ্দেশ্যমূলকতার দিকে নির্দেশ করে যা খ-ন করা কঠিন,’ তিনি বলেছিলেন। ইচ্ছাকৃতভাবে সাংবাদিক ও বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলা গুরুতর যুদ্ধাপরাধ। আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক বলেছে যে, তারা এই হামলার জন্য আইনগত ও নৈতিকভাবে ইসরাইলকে দায়ী করেছে।

ইসরাইল যুদ্ধাপরাধ করছে : নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল জ্যান এগল্যান্ড উত্তর গাজা থেকে দশ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক সরিয়ে নেয়ার ইসরাইলের আদেশকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে নিন্দা করেছেন। স্কাই নিউজের সাথে একটি সাক্ষাতকারে, এগল্যান্ড পশ্চিমা এবং আরব দেশগুলিকে আদেশ প্রত্যাহারের জন্য ইসরাইলকে চাপ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে, কোন এলাকার সাধারণ মানুষকে জোরপূর্বক চলে যাওয়ার জন্য বলা হলে সেটি একটি যুদ্ধাপরাধ,’ তিনি উল্লেখ করেন যে, আদেশে ‘কোনও সময়ে তাদের ফিরিয়ে আনার কোন বাস্তব প্রতিশ্রুতি’ অন্তর্ভুক্ত নয়। এর আগে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উত্তর গাজায় ইসরাইলকে তাদের সরিয়ে নেয়ার আদেশ পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, পরিস্থিতি ‘বিপর্যয়কর বৃদ্ধির একটি মুহুর্তের’ কাছে যাচ্ছে।

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের উপরে ইসরাইলের হামলায় নিহত ৭০ : গাজায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের গাড়িবহরে বোমা ফেলেছে ইসরাইল। এতে অন্তত ৭০ জন নিহত এবং দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছে, নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এদিন গাজা ছেড়ে পালানোর সময় বেসামরিকদের একটি গাড়িবহরে বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। চলমান সংঘাতে হামাসের হামলায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ ইসরাইলি নিহত এবং ৩ হাজার ২৯৭ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে, ইসরাইলের হামলায় ৬১৪ শিশুসহ ১ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আর ৭ হাজার ৬৯৬ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

গাজায় ইসরাইলের গোলাবর্ষণে বিদেশিসহ ১৩ জিম্মি নিহত : হামাসের সামরিক শাখা ইজ আল-দিন আল-কাসাম ব্রিগেড বলেছে যে, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের গোলাবর্ষণে বিদেশীসহ ১৩ জিম্মি নিহত হয়েছে। ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলের ব্যাপক গোলাবর্ষণের ফলে উত্তর গাজা গভর্নরেটে ছয়জন, গাজা গভর্নরেটে সাতজন এবং অন্যান্য গভর্নরেটে তিনজন জিম্মি নিহত হয়েছে,’ ফিলিস্তিনি কট্টরপন্থীরা তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলেছে।

ওয়াশিংটন পোস্ট এর আগের দিন জানিয়েছে যে, হামাস ইসরাইলে অভিযানের সময় জিম্মি করা কমপক্ষে ৬৪ জনকে গাজায় নিয়ে এসেছে। সংবাদপত্রের মতে, ৬৪ জনের মধ্যে ৪৯ জনকে বেসামরিক নাগরিক বলে মনে হচ্ছে, যার মধ্যে নয়টি শিশু রয়েছে এবং ১১ জনকে ইসরাইলি সেনা বলে মনে হচ্ছে। ৯ অক্টোবর, ইসরাইলি সংবাদপত্র দ্য জেরুজালেম পোস্ট রিপোর্ট করেছে যে, বিভিন্ন ফিলিস্তিনি দল অন্তত ১৩০ জনকে জিম্মি করেছে এবং আটক করেছে। ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন পরে বলেছিলেন যে, হামাস ১০০ জনের বেশি মানুষকে জিম্মি করেছে।

সাম্প্রদায়িক অবস্থান নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে কটাক্ষ এরদোগানের : তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েপ এরদোগান শুক্রবার বিমানবাহী রণতরী পাঠিয়ে এবং সাম্প্রদায়িক ভাষা ব্যবহার করে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছেন।

‘অবশ্যই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে বিমানবাহী রণতরী প্রেরণ করে দুর্ভাগ্যবশত শান্তিতে অবদান রাখে না বা কোন পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে পারে না,’ এরদোগান টেলিভিশন মন্তব্যের সময় বলেছিলেন। ‘মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী (অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন) বলেছেন, ‘আমি একজন ইহুদি হিসেবে ইসরাইলের সাথে যোগাযোগ করি, একজন পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে নয়।’ এটা কি ধরনের পন্থা? জবাবে যদি জনগণ আপনাকে বলে যে, তারা মুসলিম হিসেবে এই অঞ্চলের কাছে যাবে, আপনি কী বলবেন? মানুষ হিসেবে মানুষের কাছে যাওয়া উচিত।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেছেন যে, গাজার ৩৬০ বর্গকিলোমিটারে ২০ লাখ মানুষের বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানী এবং খাদ্য বিচ্ছিন্ন করা ইসরাইল কর্তৃক সবচেয়ে মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন। তিনি বলেছেন, ‘গাজার জনগণের পাইকারি শাস্তি সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে এবং আরও ব্যথা, আরও উত্তেজনা এবং আরও কান্নার কারণ হবে।’ তিনি জানিয়েছেন যে, তুরস্ক মিশরের এল আরিশ বিমানবন্দরে খাদ্য, পানি এবং চিকিৎসা সরবরাহ সহ জরুরি সহায়তা বহনকারী একটি সামরিক বিমান পাঠিয়েছে এবং ইসরাইলকে রাফাহ ক্রসিং দিয়ে গাজায় সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দিতে আহ্বান জানিয়েছে। এরদোগান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যকে সাহায্য না পাঠিয়ে এ অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের সমালোচনা করেছেন। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন যে, তারা ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ডকে ইরানসহ অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ হিসেবে স্থানান্তরিত করেছে যাতে আরও উত্তেজনা রোধ করা যায়।

নিউইয়র্ক পুলিশের ছুটি বাতিল : সাবেক হামাস প্রধানের বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের আহ্বানের পর শুক্রবার নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডি) সদস্যদের ইউনিফর্ম পরে রিপোর্ট করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবিসি নিউজ এবং অন্যান্য নিউজ আউটলেটগুলি দ্বারা প্রাপ্ত একটি অভ্যন্তরীণ বার্তা অনুসারে, সম্ভাব্য হুমকির প্রতিক্রিয়ায় বিভাগটি সেদিন অফিসারদের জন্য সমস্ত ছুটি বাতিল করেছে। ‘সমস্ত পুলিশ সদস্যদের ইউনিফর্ম পরে দায়িত্ব পালন করতে হবে - অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত, পরিষেবার সমস্ত ইউনিফর্মধারী সদস্য, প্রতিটি পদে, দিনের ইউনিফর্মে দায়িত্ব পালন করবেন এবং স্থাপনার জন্য প্রস্তুত থাকবেন,’ এবিসি রিপোর্ট করেছে। ২০০৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত হামাসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা খালেদ মেশালের একটি বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় এই পদক্ষেপটি এসেছে, যেখানে তিনি প্রতিবাদ মঞ্চস্থ করার জন্য ইসলামী বিশ্বকে আহ্বান জানিয়েছেন।

মধ্যপ্রাচ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য নিরাপত্তা পরিষদের আহ্বান রাশিয়ার : মধ্যপ্রাচ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার রাশিয়ার ওই প্রস্তাবটি উপস্থাপণ করে। নথিতে বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নিশ্চিত করা সম্ভব। রাশিয়া একটি অবিলম্বে এবং দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে যা সকল পক্ষ সম্মান করবে। একটি রাশিয়া-প্রস্তাবিত জাতিসংঘের নিরাপত্তা রেজোলিউশন তাসের কাছে উপলব্ধ করা হয়েছে, যাতে জিম্মিদের অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান জানানো হয়। নথি অনুসারে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ‘বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সমস্ত সহিংসতা এবং শত্রুতা এবং সমস্ত সন্ত্রাসবাদের তীব্র নিন্দা করে।’ নথিতে ‘খাদ্য, জ্বালানি এবং চিকিৎসা সহ মানবিক সহায়তার নিরবচ্ছিন্ন বিধান এবং বিতরণের পাশাপাশি প্রয়োজনে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার জন্য পরিস্থিতি তৈরি করার’ আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাশিয়ার অবস্থানে প্রশংসা হামাসের : ফিলিস্তিনি হামাস আন্দোলন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের অবস্থান এবং গাজা উপত্যকায় পরিস্থিতি নিষ্পত্তির জন্য মস্কোর প্রচেষ্টার প্রশংসা করে, গ্রুপটির টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে বলেছে। ‘হামাস আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে চলমান ইহুদিবাদী আগ্রাসনের বিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের অবস্থানের প্রশংসা করে। তিনি গাজা উপত্যকার অবরোধ, মানবিক সহায়তা বন্ধ করা এবং নিরস্ত্র বেসামরিকদের উপর হামলার বিপক্ষে। আমরা এটাও নিশ্চিত করি যে আমরা রাশিয়াকে স্বাগত জানাই গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক ও বর্বর ইহুদিবাদী আগ্রাসন বন্ধ করতে তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টার জন্য,’ বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

এর আগে, রুশ নেতা বলেছিলেন যে ইসরাইল একটি নৃশংস হামলার শিকার হয়েছে, তবে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই সংঘাতের নিষ্পত্তি সম্ভব। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, গাজায় স্থল অভিযানের ক্ষেত্রে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা অগ্রহণযোগ্য হবে। রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বোগদানভ তার পক্ষ থেকে উল্লেখ করেছেন যে, গাজার বাসিন্দাদের জোরপূর্বক সরিয়ে নেয়া মানবাধিকারের লঙ্ঘন। তিনি আরও বলেন, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সঙ্ঘাত বন্ধ হওয়া উচিত।

হামাসের হামলার কথা জানিয়েছিল সিআইএ! পদক্ষেপ নেননি নেতানিয়াহু : ইসরাইলের বুকে বেনজির হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। কিন্তু এত বড় হামলার কথা ইসরাইলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ টের পেল না? গত আটদিন ধরে এই প্রশ্নই ঘুরছে আন্তর্জাতিক মহলে। এক রিপোর্ট মোতাবেক, হামাস আক্রমণের দিনক্ষণ নিয়ে আগেই নাকি ইসরাইলকে সতর্ক করেছিল মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ।

সিএনএন সূত্রে খবর, মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ অনুমান করেছিল ইসরাইলে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে হামাস। এমনকী ২৮ সেপ্টেম্বর ও ৫ অক্টোবরে সীমান্তজুড়ে রকেট ছোড়ার পরিকল্পনা ছিল এই গোষ্ঠীর। সেই তথ্যও তাদের কাছে ছিল। গত ৬ অক্টোবর অর্থাৎ হামলার একদিন আগে আমেরিকার কর্মকর্তাদের হাতে একটি রিপোর্ট আসে যেখানে উল্লেখ রয়েছে, হামাস সন্দেহজনক কার্যকলাপ চালাচ্ছে। ভয়ংকর কোনও বিপদ যে শিয়রে সেই সম্পর্কে নাকি অবগত ছিল ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার। তাহলে কেন কোনও পদক্ষেপ নেয়া হল না তেল আভিভের পক্ষ থেকে? উঠছে প্রশ্ন।

বিশ্লেষকদের মতে, হামাস হামলার আগে থেকেই ডামাডোল চলছিল ইসরাইলে। দুর্নীতির অভিযোগে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বিরুদ্ধে। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ ইসরাইলিরা। ফলে যুদ্ধ পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে দেশের জনগনের সমর্থন পেতে চাইছেন তিনি। যার মাধ্যমে সুরক্ষিত হবে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। সেই জন্যই হয়তো সব জেনেও চুপ ছিলেন নেতানিয়াহু। অপেক্ষা করছিলেন সঠিক সুযোগের। কিন্তু এই টালবহানায় গত আটদিনের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তিন হাজারের উপর মানুষ। সূত্র : সিএনএন, রয়টার্স, তাস, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, মিডল ইস্ট মনিটর।

সর্বশেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৩১
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও