জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪

মে মাসে ১৩টি বজ্রঝড়ের আভাস

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্সঃ

বাংলাদেশের আটটি বিভাগে আগামী তিন দিনে কালবৈশাখী ঝড়ের সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। আগামী বুধবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই সতর্কবার্তা বহাল থাকবে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ বছর মে মাসে বাংলাদেশে গড়ে ১৩টি বজ্র-ঝড় বা কালবৈশাখী ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এর কমবেশিও হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস

আবহাওয়া অধিদফতর যে পূর্বাভাস দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, সোমবার ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া-সহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টিও হতে পারে।

মঙ্গলবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টি হতে পারে।

অধিদফতর বলছে, আগামী পাঁচদিন সারাদেশে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে।

আবহাওয়া-বিদ বজলুর রশীদ বলছেন, ‘দমকা হাওয়া, ঝোড়ো হাওয়া-সহ বৃষ্টি বা বজ্র-বৃষ্টি, এর সবই কালবৈশাখীর বৈশিষ্ট্য। আগামী চার-পাঁচদিন কালবৈশাখী ঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে। রংপুর, রাজশাহী-সহ বেশ কয়েকটি জেলায় সম্ভাবনা বেশি হলেও সারাদেশেই কালবৈশাখী হতে পারে এ কয়দিন।’

মে মাসে যে পরিমাণ কালবৈশাখীর সম্ভাবনা

দেশে সবচেয়ে বেশি বজ্র-ঝড় হয় মে মাসে। এপ্রিল, জুন ও সেপ্টেম্বর মাসেও হয় এই ঝড়।

তবে সব বজ্র-ঝড় কালবৈশাখী নয়। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে যে ঝড় হয় তাকে স্থানীয়ভাবে বজ্র-ঝড় বা কালবৈশাখী বলা হয়ে থাকে।

তারা বলছেন, উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা বায়ুর কারণে এই ঝড় হয়। একে ইংরেজিতে নরওয়ে-স্টার বলা হয়।

আবহাওয়া-বিদ বজলুর রশীদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘বঙ্গোপসাগর থেকে গরম বাতাস বয়ে যায় উত্তর দিকে আর হিমালয় থেকে ঠাণ্ডা বাতাস আসে দক্ষিণে। এই ঠাণ্ডা ও গরম বাতাসের মিলনস্থলে বজ্রসহ ঘন কালো মেঘ তৈরি হয়। সেখান থেকে ঠাণ্ডা বাতাস নিচে নেমে এসে কালবৈশাখী ঝড়ের সৃষ্টি করে।’

সাধারণত চৈত্র মাসের শেষে এবং বৈশাখ মাসে সূর্য বাংলাদেশ ও তার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের ওপর খাড়াভাবে কিরণ দেয়।

ফলে এই অঞ্চলের বাতাস সকাল থেকে দুপুরের রোদের তাপে হালকা হয়ে ওপরের দিকে উঠে যায়। এভাবে বিকেলের দিকে এ অঞ্চলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এ সময় দেশের উত্তরে এবং হিমালয়ের দিকে বাতাসের চাপ বেশি থাকে।

তাই উচ্চ চাপের উত্তরাঞ্চল থেকে বায়ু প্রবল বেগে দক্ষিণ দিকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ধাবিত হওয়ার ফলে মুখোমুখি স্থানে যে প্রবল ঝড়ের সৃষ্টি হয় সেটিই বাংলাদেশে কালবৈশাখী নামে পরিচিত।

আবহাওয়া-বিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘মাস-ভিত্তিক বজ্রঝড়ের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৮১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মে মাসে গড়ে ১৩টি বজ্র-ঝড় বা কালবৈশাখী ঝড় হয়েছে। এবারো সেই গড় বজ্রঝড়ের কাছাকাছি ঝড় হতে পারে। তবে কমবেশিও হতে পারে।’

তবে অতীতে এ মাসে গড়ে ১৩টি বজ্র-ঝড় এবং সর্বোচ্চ ১৮টি বজ্র-ঝড় হওয়ার রেকর্ডও রয়েছে বলে জানান আবহাওয়াবিদরা।

এপ্রিলে কেন কমছে কালবৈশাখী?

এপ্রিল মাসে সাধারণত গরম বেশি হয়। বজ্র-ঝড় বা কালবৈশাখী হলে সেই গরম কমে।

তবে এ বছরের আবহাওয়ার উদাহরণ দিয়ে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গত ৭৬ বছরের মধ্যে এ বছর এপ্রিলেই তাপপ্রবাহ ছিল সবচেয়ে বেশি।

আবহাওয়া-বিদ আবুল কালাম মল্লিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘১৯৪৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যে তথ্য-উপাত্ত রয়েছে তাতে দেখা যায় এ বছরের এপ্রিলের মতো টানা তাপপ্রবাহ আর হয়নি। কেবল ১৯৯২ সালে ৩০ দিনের মতো শুধুমাত্র দেশের পশ্চিমাঞ্চলে তাপপ্রবাহ ছিলে। কিন্তু সারাদেশে টানা এতো সময় ধরে তাপপ্রবাহ এবারই এতো বেশি ছিল।’

তিনি বলছেন, ‘এপ্রিলে সাধারণত নয়টি বজ্র-ঝড় তৈরি হয়। ২০২৩ সালের এপ্রিলে সাতটি বজ্র-ঝড় হয়। কিন্তু এ বছর এপ্রিলে শুধু একটি বড় মাত্রার বজ্র-ঝড় বা কালবৈশাখী ঝড় হয়েছে।’

‘তবে, চারটি ছোট মাত্রার বজ্র-ঝড় হলেও বড় মাত্রার একটিই হয়েছে। দেশে এ বছরের মতো এতো দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহের কারণেই এপ্রিলে ঝড় কমছে’, মনে করছেন আবুল কালাম মল্লিক।

তবে এপ্রিলে কালবৈশাখী ঝড় কমে যাওয়ার আরো কারণ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলছেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও লোকাল ফেনোমেনার যে বৈশিষ্ট্যগুলো, সেগুলোর পরিবর্তন হয়েছে। অর্থাৎ জলবায়ুর স্থানীয় ও বৈশ্বিক বৈশিষ্ট্যগুলোর পরিবর্তন হয়েছে।’

‘যে বছর এল নিনো সক্রিয় থাকে, সে বছর আমাদের দেশে বৃষ্টিপাত কমে যায়, ঝড়ের সংখ্যাও কমে যায়। আমাদের দেশে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া বিরাজ করে। যেটা এবার দেখা গেছে।’

‘ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ত্বরান্বিত হলে বৈশ্বিক তাপের প্যার্টানের পরিবর্তন হয়, সমুদ্র স্রোতের বৈশিষ্ট্যগুলোর বৈসাদৃশ্য দেখা দেয়, ফলে বিভিন্ন জায়গায় চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া তৈরি হয়। এক ধরনের অনিশ্চয়তাও দেখা দেয়’, বলছিলেন আবুল কালাম মল্লিক।

কালবৈশাখী ঝড়ের পূর্বাভাস করা যায় কি?

আবহাওয়াবিদরা বলছেন খুব অল্প সময়, অর্থাৎ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঝড়টি তৈরি হয় বলে কয়েক দিন আগে এ সম্পর্কে ধারণা করা কঠিন।

অবশ্য কোনো অঞ্চলে ব্যাপক গরম পড়লে, তখন কেউ কেউ অনুমান করেন যে এ ধরনের ঝড় হতে পারে। তবে এটি নিতান্তই আবহাওয়ার অবস্থা দেখে অনুমান করা।

কালবৈশাখী কোথায় কতক্ষণ হবে সেটি আগে থেকেই জানিয়ে দেয়ার মতো বৈজ্ঞানিক কোনো উপায় এখনো নেই।

আবহাওয়া-বিদ বজলুর রশীদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, এটি তৈরি হয় ৫/৬ ঘণ্টা আগে আর শতভাগ বোঝা যায় ২/৩ ঘণ্টা আগে।

‘অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হলে ঢাকায় আসতে যতক্ষণ লাগে সেটি বলে দেয়া যায়। আর কোথাও কোথাও অন্য লক্ষণ দেখে বিকালের ঝড় সম্পর্কে সকালে কিছুটা বলা সম্ভব হতে পারে’, বলেন তিনি।

তবে ঝড়ের পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে এখন হাই ইমপ্যাক্ট ওয়েদার এসেসমেন্ট টুল ব্যবহার করা হচ্ছে এবং নাসার মতো সংস্থাও এতে সহায়তা দিচ্ছে।

বজলুর রশীদ বলেন, ‘এটি আমরা ব্যবহারের চেষ্টা করছি। কিন্তু এটি মাঝে মধ্যেই ফলস অ্যালার্ম দিচ্ছে। সে কারণে এখনো নির্ভর করা যায় না। আরো কিছুদিন ব্যবহার চললে হয়তো বোঝা যাবে।’

কাল শব্দের অর্থ ধ্বংস এবং বৈশাখ মাসে উৎপত্তি হয় বলে একে কালবৈশাখী নামে অভিহিত করা হয়। গ্রীষ্ম ঋতুর সাথে হাত ধরাধরি করে এ ঝড়ের আগমন ঘটে।

সাধারণ ঝড় ও কালবৈশাখীর মধ্যে পার্থক্য

সাধারণ ঝড় গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে হয় গভীর সমুদ্রে নিম্নচাপ-সহ নানা কারণে। এসব ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ নাও চমকাতে পারে বা বজ্রপাত নাও হতে পারে।

কিন্তু কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে বিদ্যুৎ চমকায় এবং বজ্রপাত হয়। এ ধরনের ঝড়ে সাইক্লোন বা টর্নেডোর মতো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি না হলেও যে এলাকায় এটি হয় সেখানে বাড়িঘর, জমি বা গাছপালার ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবছরই কালবৈশাখী হয়। এর স্থায়িত্বকাল হয় অল্প। একটি কালবৈশাখী ঝড় তৈরি হয়ে পূর্ণতা লাভের পর ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত এর তীব্রতা থাকে। পরে তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে সাধারণত শেষ বিকেলে এবং সন্ধ্যার দিকে কালবৈশাখী হয়। কিন্তু পূর্বাঞ্চলে সন্ধ্যার পরে হয়।

কালবৈশাখী ঝড়ের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার হয়ে থাকে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর গতিবেগ ঘণ্টায় এক শ’ কিলোমিটারেরও বেশি হতে পারে।

এই ঝড়ের স্থায়িত্বকাল খুব বেশি হয় না। তবে কখনো কখনো এই ঝড় এক ঘণ্টারও বেশি স্থায়ী হতে দেখা গেছে।

কিন্তু কালবৈশাখী ঝড় একেবারেই হঠাৎ করে ধেয়ে আসে না। ঈশান কোণে জমা হওয়া কালো মেঘ এই ঝড়ের আভাস দেয়।

সূত্র : বিবিসি

সর্বশেষ আপডেট: ৬ মে ২০২৪, ১৫:৪৮
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও