হাসিনার পতনের পর হিন্দুদের ওপর হামলার ৯৮% রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্সঃ

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এসব হামলার ৯৮ শতাংশই ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এক হাজার ৪১৫টি হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে, এর মধ্যে ৯৮ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল রাজনৈতিক কারণে। সাম্প্রদায়িক কারণে হামলার সংখ্যা ছিল মাত্র ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

অধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব হামলা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। মানবাধিকার সংস্থা জানায়, এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ৮৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অধিকার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত বছর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছিল। শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন শুরুর পর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতিত হয় এবং তিনি ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। প্রতিবেদনটি জানায়, শেখ হাসিনার সরকার গণঅভ্যুত্থান দমনে জনগণের উপর ব্যাপক সহিংসতা চালায়, যাদের মধ্যে অনেক ছাত্র, শ্রমিক এবং সাধারণ মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রতিবেদন প্রস্তুতকাল পর্যন্ত ৮৩৪ জন নিহত হন, যারা বেশিরভাগই ছিলেন আন্দোলনকারী ছাত্র ও শ্রমিক। এছাড়া ৪৪ জন পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ১৮ জন, গুমের শিকার হয়েছেন ২০ জন, এবং কারাগারে ৮৩ জন নিহত হয়েছেন।

গণমাধ্যমকর্মীরাও হামলার শিকার হয়েছেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত বছর ১৩৫ সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছেন, ২৭ জন লাঞ্ছিত হয়েছেন এবং ৫ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৪ জনই জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের সময় নিহত হন।

অধিকার সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশও দিয়েছে। এতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গণহত্যা, নির্যাতন ও গুমের সাথে জড়িত আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের বিচারের মুখোমুখি করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, নির্যাতনবিরোধী জাতিসংঘ সনদের অপসোনাল প্রোটোকল অনুমোদন এবং ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ মামলার নির্দেশনা অনুযায়ী রিমান্ডের নামে নির্যাতন বন্ধ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, দেশের মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে, নিবর্তনমূলক আইনগুলো বাতিল করে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও