মৌলভীবাজার-৩:ভোটের মাঠে অপ্রত্যাশিত লড়াই, জামায়াতের উত্থানে চ্যালেঞ্জের মুখে বিএনপি

ছবি মুক্তিবাণী
ছবি মুক্তিবাণী
মুক্তিবাণী ডেক্স রিপোর্টঃ

মৌলভীবাজার-৩ আসন (সদর ও রাজনগর উপজেলা) বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ১৯৮৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১১টি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে ৭ বার। বিএনপি ৩ বার এবং জাতীয় পার্টি ১ বার। তবে এবারের নির্বাচনে দলটির সরাসরি অংশগ্রহণ না থাকায় নির্বাচনের সমীকরণ ভিন্ন মোড় নিয়েছে।

ছবি মুক্তিবাণী

ভোটের মাঠের তৎপরতা: স্থানীয় রাজনীতির গতিপ্রকৃতি ও মাঠ জরিপ বলছে—এবারের নির্বাচনে বিএনপির চেয়ে জামায়াত ইসলামী সামান্য এগিয়ে রয়েছে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং আওয়ামী লীগের আমলে টেন্ডার বাণিজ্য ও দখলদারিত্বের অভিযোগ থেকে জন্ম নেওয়া জনরোষের ফসল হিসেবে জামায়াত ইসলামী স্থানীয় সমর্থন বাড়াতে পেরেছে।

ভোটের বাস্তবতা: মৌলভীবাজার-৩ আসনের মোট ভোটার ৬,১৯,৯৫৮ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪,৫৬,৩৯২ জন এবং রাজনগরে ১,৬৩,৫৬৬ জন। নারী ও পুরুষ ভোটারের সংখ্যা প্রায় সমান। অতীতে আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থানের কারণে এ আসনে বিরোধী পক্ষগুলো তেমন গুরুত্ব পায়নি। এবার তাদের অনুপস্থিতিতে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্র হচ্ছে।

বিএনপির অন্তঃকলহের সুযোগ নিচ্ছে জামায়াত: বিএনপির স্থানীয় ইউনিটের মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে বিভাজন প্রবল। অনেক নেতাকর্মী কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট। একাংশের অভিযোগ—‘উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত স্থানীয় বাস্তবতার প্রতি অন্ধ’। ফলে প্রার্থী নির্বাচনে দ্বিধা, প্রচারণায় সমন্বয়হীনতা ও নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয়তায় ভুগছে বিএনপি।

এই ফাঁক গলে জামায়াত ইসলামী সুসংগঠিত নেটওয়ার্ক দিয়ে মাঠ দখলে রাখছে। স্থানীয় পর্যায়ে ধর্মীয় ও সামাজিক যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে জামায়াত ভোটারদের কাছে সরাসরি পৌঁছাচ্ছে।

টেন্ডার-দখলদারিত্বের ক্ষোভকে পুঁজি করছে জামায়াত: আওয়ামী লীগের গত শাসনামলে স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্পে টেন্ডার বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অভিযোগ বেশ পুরনো। স্থানীয়দের অনেকে মনে করেন, ‘একটি সুবিধাভোগী মহল সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে’। ফলে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ জমেছে, যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। জামায়াত ইসলামী এসব ইস্যুকে সামনে এনে নিজেদের “বিকল্প শক্তি” হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।

মাঠ পর্যায়ের কণ্ঠস্বর: রাজনগরের এক স্কুলশিক্ষিকা রিনা আক্তার বলেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা, কিন্তু বিকল্প কে—তা নিয়ে দ্বিধা আছে। জামায়াতের নেতারা অন্তত মানুষের কথা শুনছেন। বিএনপির তেমন তৎপরতা নেই।”

সদরের ব্যবসায়ী আব্দুল মোতালিব বলেন, “টেন্ডার ও দখলদারদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার সাহস জামায়াতই দেখিয়েছে। বিএনপি ঐক্যবদ্ধ না হলে ভোট ভাগ হয়ে যাবে।”

বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. ফারুক আহমেদ মনে করেন— “বিএনপি দুর্বল সংগঠন নয়, কিন্তু নেতাকর্মীদের আচরণে জনমানুষের মধ্যে বিরক্তি ছড়িয়েছে। অন্যদিকে জামায়াতের কর্মীরা ভোটারদের সম্মান ও গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যবাহী ভোট ব্যাংক জামায়াতের দিকে কতটা যাবে, সেটিই নির্ধারণ করবে চূড়ান্ত ফলাফল।”

চূড়ান্ত সমীকরণ:বিএনপির সম্ভাবনা: অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করে ঐক্যবদ্ধ প্রচারণা চালাতে পারলে, এবং আওয়ামী লীগ আমলের দুর্নীতিকে ইস্যু বানাতে পারলে ভোট নিজেদের পক্ষে আনা সম্ভব।

জামায়াতের সুযোগ: বিএনপির দুর্বলতা পুরোপুরি কাজে লাগানো, তৃণমূল পর্যায়ের সুসংগঠিত কার্যক্রম এবং ধর্মীয়-সামাজিক ইমেজকে ভোটের মূল শক্তিতে পরিণত করা।

মৌলভীবাজার-৩ আসনে এ নির্বাচন রীতিমতো উত্তপ্ত। আওয়ামী লীগের সরাসরি অনুপস্থিতিতে মাঠের রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে শূন্যতা, যার দখল নিতে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে চলছে প্রতিযোগিতা। বিএনপি কি শেষ মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়াবে, নাকি মৌলভীবাজারে জামায়াত ইসলামী প্রথমবারের মতো ইতিহাস গড়বে?

এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে ভোটের বাক্স খোলার পর।

সর্বশেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২৫, ১৯:৫৩
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও