জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪

বিএনপির এক দফা সরকারের পদত্যাগ

মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্স :

স্বল্প সময়ের ঘোষণা, দেশি-বিদেশীদের কাছে সর্বোচ্চ শক্তি প্রদর্শনের চ্যালেঞ্জ, পথে পথে পুলিশের তল্লাশির নামে বাধার অভিযোগ, দফায় দফায় বৃষ্টিসহ নানামুখী প্রতিবন্ধকতায় উত্তীর্ণ রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। পরিকল্পনা অনুযায়ী নয়াপল্টনে লাখো মানুষের জমায়েত করতে পেরেছে দলটি। নয়াপল্টন ঘিরে চারপাশে দলটির নেতাকর্মীরা যে জন¯্রােত তৈরি করেছিলেন তা সাম্প্রতিক সময়ের যেকোন সমাবেশের উপস্থিতিকে হার মানিয়েছে। আর এই লাখো জনতার মাঝেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে এক দফার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই দিনে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ৩৬টি রাজনৈতিক দল ও জোট পৃথকভাবে এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই ঘোষণার মাধ্যমে সরকার পতনের আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে গড়ালো বলে মনে করছেন এসব দলের নেতারা।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল (৩৬টি) মিলে এক দফা আন্দোলনের যৌথ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর কোনো দফা নেই। দেশের ১৮ কোটি গণতন্ত্রকামী মানুষের পক্ষে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তরুণ নেতা তারেক রহমানের পক্ষে এক দফা আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করছি। কর্মসূচি হচ্ছে- বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগ ও বিদ্যমান অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি; নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন পুনঃগঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা; বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি, মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েসি সাজা বাতিল এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ১ দফা দাবিতে রাজপথে সক্রিয় বিরোধী রাজনৈতিক জোট ও দলসমূহ যুগপৎ ধারায় ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তোলা ও সফল করার ঘোষণা প্রদান করছে।

উপরোক্ত ১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ১৮ জুলাই (মঙ্গলবার) ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশে মহানগরী ও জেলা পর্যায়ে পদযাত্রা। ঢাকা মহানগরীতে সকাল ১০টা হতে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত গাবতলী হতে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এবং ১৯ জুলাই (বুধবার) ঢাকা মহানগরীতে সকাল ১০টা হতে বিকাল ৪টায় উত্তরার আব্দুল্লাহপুর হতে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত পদযাত্রা। এই কর্মসূচি বাইরে দলের অঙ্গসংগঠনের ঘোষিত তারুণ্যের সমাবেশ ও পদযাত্রা কর্মসূচিও চলবে।

একইভাবে যুগপতের শরিক অন্যান্য দল ও জোটের পক্ষেও পৃথকভাবে এক দফা আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে গণতন্ত্র মঞ্চ ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা যৌথ রুপরেখা ঘোষণা করলেও বিএনপি এবং অন্য শরিকরা তা করেনি। গণঅধিকার পরিষদ আগামী শুক্রবার এটি ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।

২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গোপীবাগ মাঠে ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ থেকে ১০ দফা ঘোষণা করেছিল বিএনপি। টানা ৭ মাস পর সরকার পদত্যাগের একদফার ঘোষণা দিলেন বিএনপি মহাসচিব। সরকার পতনের আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে চলতি মাসের মাঝামাঝি সমাবেশ করে এক দফা ঘোষণার পরিকল্পনা নিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু এরই মধ্যে দেশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পৃথক দুটি প্রতিনিধি দল অবস্থান করছে। দেশের পাশাপাশি বিদেশী রাষ্ট্রগুলো, যারা বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে তাদেরকে নিজেদের শক্তি দেখানোর জন্য এই সমাবেশ এগিয়ে আনা হয়। মাত্র ৩দিন আগে সিলেট থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। একইসঙ্গে ঢাকার সমাবেশ বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি দেখিয়ে দেখাতে চেয়েছে সরকার বিরোধী আন্দোলন সাধারণ মানুষ স্বত;স্ফূর্ত অংশ নিচ্ছে এবং ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি বেশিরভাগ মানুষের আস্থা নেই। স্বল্প সময়ের নির্দেশনা ও প্রচারণাতেই গতকাল বুধবার ঢাকায় লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ করেছে দলটি।

যদিও বিগত কর্মসূচিগুলোর মতো এবারের সমাবেশের আগে পুলিশের হয়রানি, বাড়িতে বাড়িতে কিংবা হোটেলে অভিযানের বড় কোন অভিযোগ করেনি বিএনপি। তবে সমাবেশের দিনে সকাল থেকে রাজধানীর প্রবেশপথ আমিনবাজার, টঙ্গী, চিটাগাং রোড, মাওয়া রোডে বিএনপি নেতাকর্মীদের গাড়ি আটকে দেয়া, থানায় নেয়া, তল্লাশির অভিযোগ করা হয়েছে।

এরপরও সমাবেশের দিন সকাল থেকেই নয়াপল্টন এলাকায় আসতে থাকেন দলটির নেতাকর্মীরা। সকাল ১০টার আগেই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নেন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। একই সঙ্গে ঢাকা মহানগর, ঢাকা জেলা ও ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন নয়াপল্টনের দিকে। বেলা ১২টা বাজারও আগে বিএনপির সমাবেশস্থল নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের একদিকে নাইটিঙ্গেল মোড় অন্যদিকে ফকিরাপুল মোড় ছাড়িয়ে যায়। নির্ধারিত সময় বেলা ২টায় সমাবেশ শুরুর সময় সমাবেশে অংশগ্রহণকারী জনতার ¯্রােত একদিকে কাকরাইল মোড় ছাড়িয়ে ভিআইপি রোড-শান্তিনগর-বিজয়নগর পানির ট্যাংকি অন্যদিকে আরামবাগ, দৈনিকবাংলা সড়কে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া নয়াপল্টনের আশপাশে যত অলিগলি ছিল তার সবগুলোই ছিল মানুষে পরিপূর্ণ।

পুরো সড়ক জুড়ে মানুষের তিল পরিমাণ ঠাঁই ছিলো না। যদিও ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত তিন দফা বৃষ্টি হানা দিয়েছে। কিন্তু এই গুড়ি গুড়ির বৃষ্টির মধ্যে লাল-সবুজ-হলুদ টুপি পড়ে নেতাকর্মীরা ‘এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি’, ‘দেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে’ ‘দফা এক দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’, ইত্যাদি শ্লোগান দিতে দেখা যায়।

সরেজমিন দেখা গেছে, পুরানা পল্টন মোড়, মতিঝিল-আরামবাগ, মগবাজার-মালিবাগ, সেগুনবাগিচা-মৎস্যভবন, কাকরাইল মোড়, খিলগাঁও-শাহজাহানপুর, শান্তিনগর এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল। সকালের দিকে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করে। সমাবেশ শুরু হয় বেলা ২টায়। দলীয় কার্যালয়ের সামনে কয়েকটি ট্রাক একত্রিত করে অস্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। লাগানো হয়েছে শতাধিক মাইক। সমাবেশের মূল ব্যানারে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছবির পাশে লেখা ‘গণতন্ত্রের ঘাতক, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও সর্বনাশা অনাচারে লিপ্ত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যুগপত ধারায় বৃহত্তর গণ-আন্দোলনের ১ দফা যৌথ ঘোষণা’। এতে কুরআন তিলাওয়াত ও মুনাজাত পরিচালনা করেন ওলামা দলের শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হক।

প্রাথমিক কর্মসূচি:

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর মধ্যে আগামী ১৮ ও ১৯ জুলাই ঢাকা মহানগরসহ সকল বিভাগীয় ও জেলায় পদযাত্রা। এসময় তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এটা হচ্ছে আমাদের প্রাথমিক কর্মসূচি। এরপরেও আঙ্গুলে ঘি না উঠে তাহলে কি করে উঠাতে হয় এদেশের মানুষ তা জানে। আজকে শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে যেভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ এখানে সমবেত হয়েছে, আগামী দিনগুলোতেও ইনশাআল্লাহ ১৮ ও ১৯ তারিখ শুধু নয় তারপর প্রয়োজনে আপনাদের প্রত্যাশিত কর্মসূচি দিয়ে এই ফ্যাসিস্ট অবৈধ লুটেরা সরকারকে সরিয়ে নির্দলীয় সরকারের মাধ্যমে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব। সরকারের অপশাসন, দেশের অর্থনৈতিক দূরাবস্থা ও দ্রব্যমূল্যে মানুষের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইনশাআল্লাহ আমাদের বিজয় হবেই হবে।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও প্রশাসনের ব্যক্তিদের বলবো- আপনারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও সংবিধানের যে শপথ নিয়েছেন সে মোতাবেক নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখুন। নইলে পরিণতি শুভ হবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান লুটেরা অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের শত শত ভাইকে গুম করেছে। সাবেক সংসদ সদস্য প্রতিবাদী তরুণ ইলিয়াস আলীকেও তারা রেহাই দেয়নি। ঢাকার সাবেক কমিশনার চৌধুরী আলমসহ প্রায় ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে তারা গুম করেছে। অনেকের মায়ের বুক খালি করেছে। খুঁজে পাওয়া যায়নি। মা মেয়ে, ছেলে স্ত্রী সন্তানদের কোল খালি এবং অসহায় করেছে। আমাদের নেতাকর্মীরা রাতে বাসায় ঘুমাতে পারেনা। ছেলেদের চাকরি হয় না জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীকে বিনা দোষে কারাগারে আটকে রেখেছে। আমার তো এই দেশ চাইনি।

তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ঘরে ঘরে চাকরি, ১০ টাকা কেজি চাল ও কৃষকদের বিনামূল্যে সার দেওয়ার কথা বলেছি। কিন্তু নিজেরা দলীয় লোকদের চাকরি দিয়েছে ২৫ লাখ টাকায়। এখন চাল ও সারের দাম তিনগুণ বেড়ে গেছে। রিক্সাওয়ালারা বাজারে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের জন্য ভালো-মন্দ কিনতে ও খেতে পারেনা। অর্থাৎ সব শ্রেনীপেশার মানুষের পিঠ দেওয়ালে ঠেকিয়ে দিয়েছে। এদের চুরি ডাকাতি ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে গেলে শেষ হবে না।

বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমাদের দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মাত্র দুই কোটি টাকার মিথ্যা মামলায় বন্দী করে রেখেছে। তাকে পরিত্যক্ত পুরনো কারাগারে রাখা হয়েছিল। কোনো সুচিকিৎসা দেওয়া হয়নি। আজো তিনি অসুস্থ। শেখ হাসিনা কারও কথা শোনেননি। তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধান প্রতিপক্ষ মনে করেন। কিন্তু আজকে মানুষ এই অন্যায় অবিচারের নিরসন চায়। তারা এই ধ্বংসকারী সরকারকে আর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দেখতে চান না।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কি ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। মুগদা হাসপাতালে রোগীদের জায়গা হচ্ছে না। ব্যাংকগুলোতে টাকা নেই। সরকারি কোষাগার খালি করে ফেলেছে। যেই আমেরিকা স্যাংশন দিলো অমনি আমেরিকা থেকে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আসতে শুরু করলো। তাতে দুই শতাংশ ইনসেনটিভ দেওয়া হলো। কি বিচিত্র!

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা অবশ্যই নির্বাচন চাই। আপনি তো কুমিরের মতো ২০১৪, ২০১৮ সালে নির্বাচন খেয়ে ফেলেছেন। আর পারবেন না। জনগণ জেগে উঠেছে। তাদেরকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। আজকের সমাবেশ তারই প্রমাণ করে। ঢাকা শহর সয়লাব হয়ে গেছে জনতার স্রোতে। বাধা দিয়ে তরুণদেরকে দমাতে পারেনি। বরং তারা দূর্বার তরঙ্গের ন্যায় ছুটে এসেছে। আজকে দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট তৈরির জন্য বিচারপতি খায়রুল হক দায়ী। তিনি ষড়যন্ত্র করে দেশের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। এই সরকার পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ২০১৮ সালে ভোট ডাকাতি করেছেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, কোনো অর্জন ত্যাগ ছাড়া হয় না। এই সরকার আমাদের প্রায় ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে রেখেছে। গত কয়েক মাসে আমাদের সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে কারাগারে বন্দী করে রেখেছে। এরা বাংলাদেশ বিরোধী সরকার। এরা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে পারেনি। কারণ তাদের সেই যোগ্যতা নেই। তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে সমাধান করতে পারেনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্য শুনলে মনে হয় আমরা যেন কারও দাস। সুতরাং এই সরকার দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। আজকে তরুণরা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে রুখে দাঁড়াচ্ছে। প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। তারা একটি নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়। এই দাবিতে সমগ্র দেশবাসী আছে ঐক্যবদ্ধ।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দেশের লাখ লাখ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করছে। কিন্তু তাদের সমাবেশে লোক নেই। আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছে তারা লগিং বৈঠা দিয়ে মানুষ মেরে ক্ষমতায় যেতে পারবেনা। বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে শাস্তি দিতে শিখে গেছে। এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে এই সরকারের সময় শেষ। অতএব ভালোই ভালোই কেটে পড়ুন। কেননা আওয়ামী লীগের হাতে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌত্ব নিরাপদ নয়। দেশের মানুষের জীবন নিরাপদ নয়। তারা দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে।

অবিলম্বে দলের কারাবন্দী নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তি দাবি করেন মির্জা আব্বাস বলেন, একটি বিশেষ শ্রেনীর পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের সাজা দেওয়ার জন্য নানারকম ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু আমি বলবো জনগণই তাদেরকে সাজা দিবে।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সমাবেশে আসার পথে বিভিন্ন স্থানে গাড়ি বন্ধ করে নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদেরকে আটকানো যায়নি। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে পিস কমিটির চেয়ারম্যান অভিহিত করে তিনি বলেন, তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সমাবেশে চেয়ার ছোড়াছুড়ি হয়েছে। শেখ হাসিনাকে যেতে হবে এটা সত্য। তিনি কি নিজে যাবেন নাকি আমাদের তাড়াতে হবে? আমরা তাড়াতে পারলে জনগণ পুরস্কার আমাদেরকে দিবে। আমাদের কেউ আঘাত করতে আসলে পাল্টা আঘাত করতে হবে। কেউ আমাদের রক্ত নিতে আসলে তার রক্ত নিতে হবে। আমরা জনগণের মুক্তি চাই। শেখ হাসিনার হাতের মুঠো থেকে দেশকে মুক্ত করতে চাই। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। হতে দেওয়া হবে না। যারা যাবেন তাদেরকে চিহ্নিত করে জবাব দেওয়া হবে।

ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল, সুশাসন হত্যা করে কুশাসন, মানবাধিকার লঙ্ঘণ করে জঙ্গলের শাসন করেছে। দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে দিনের ভোট রাতে করেছে। অতএব বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারে না। এদেরকে বিদায় নিতে হবে এটাই আমাদের ১ দফা দাবি।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই সরকার ভোট চুরির প্রকল্পের অংশ হিসেবে বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। বিচার বিভাগ দলীয়করণ করেছে। মাঠ প্রশাসনে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পিএস-এ পিএসদের ডিসি হিসেবে নিয়োগ করা হচ্ছে। ভালো হলো নামগুলো সব পেয়ে গেছি। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে এরা কেউ স্বপদে থাকতে পারবে না।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক মো. আবদুস সালাম বলেন, আপনারা উল্টাপাল্টা কথা বলা বন্ধ করেন। সুষ্ঠু ভোট হলে দুই একটা সিট পেলে পেতে পারেন। তা না হলে জনগণের দ্বারা পতন হলে একটা সিটও পাবেন না। এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যান।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, আজকে মন্ত্রী-এমপিদের চেয়ে কাঁচা মরিচের দাম বেশি। এই সরকার পালাতে বাধ্য হবে। এখন তারা কিভাবে পালাবে সেই সিদ্ধান্ত নিন।

সভাপতির বক্তব্যে সমাবেশে উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মীদের বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন না হওয়া ও সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘরে ফিরবো না মর্মে উপস্থিত সব নেতাকর্মীকে শপথবাক্য পাঠ করান ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান।

এদিকে গতকাল বিএনপির সমাবেশ ঘিরে পথে পথে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করে বিএনপি নেতারা বলেন, গাজীপুর, ঢাকা-মাওয়া সড়ক, আমিনবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় বাঁধা দেওয়া হয়েছে। বাস থামিয়ে মোবাইলে তল্লাশি করা হয়েছে। সদরঘাটে নৌ-পারাপার বন্ধ ছিল।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব আমিনুল হক, তাইফুল ইসলাম টিপু, তানভীর আহমেদ রবিনের পরিচালনায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা শাহজাহান ওমর, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ডা. জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, মো. আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, রকিবুল ইসলাম বকুল, কামরুজ্জামান রতন, শিরিন সুলতানা, টিএস আইয়ুব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, এসএম জিলানী, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, আনোয়ার হোসাইন, হাসান জাফির তুহিন, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

পেশাজীবীদের মধ্যে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, কাদের গণি চৌধুরী, ইউট্যাবের অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, এডভোকেট মোহাম্মদ আলী ও মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সহ আইনজীবী নেতৃবৃন্দ, বিএফইউজের এম আবদুল্লাহ ও নুরুল আমিন রোকন, বিএনপির আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, মীর নাসির, ফজলুর রহমান, মিজানুর রহমান মিনু, হাবিবুর রহমান হাবিব, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুল খায়ের ভুঁইয়া, শাহজাদা মিয়া, লুতফুর রহমান খান আজাদ, মজিবুর রহমান সারোয়ার, মাহবুবউদ্দিন খোকন, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, আসাদুজ্জামান রিপন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সৈয়দ মেয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মীর সরাফত আলী সপু, শামা ওবায়েদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিন, সালাহউদ্দিন আহমেদ, শিরিন সুলতানা, রফিকুল ইসলাম, কাজী আবুল বাশার, নাজিম উদ্দিন আলমসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩, ০০:৩৪
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও