জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরের দিনের চিত্র আ.লীগ অফিসে খিচুড়ি বিতরণ বিএনপি কার্যালয়ে ঝুলছে তালা

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্স :

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচরেন দাবির হরতাল-অবরোধের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রধান কার্যালয়ে দেখা গেল বিপরীত চিত্র। ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে গিয়ে দেখা যায়, নেতা-কর্মীদের ভিড়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুখর। সেখানে দুপুরে কর্মীদের মধ্যে খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। অতপর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ২৮ অক্টোবার ঝুলানো তালা এখনো ঝুলছে; বিএননিপর অফিস আগের মতো তালাবদ্ধ। সেখানে কোনো নেতা-কর্মী নেই, রয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতি। আশপাশের অলিগলিতে থাকা নেতারা বলছেন, গ্রেপ্তারের ভয়ে বিএনপির কোনো কার্যালয়ে কেউ যাচ্ছেন না।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গত বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, ভোট হবে আগামী ৭ জানুয়ারি।

তফসিলে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ নভেম্বর। আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছে শুক্রবার থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করবে। বিএনপির অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি চলছে। গতকাল অবরোধ শেষে রবিবার ও সোমবার হরতাল কর্মসূচি দিয়েছে। ইতিমধ্যে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণ অধিকার পরিষদ আগামী রবি ও সোমবার সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টা হরতাল ডেকেছে। জামায়াত পৃথকভাবে হরতাল ডেকেছে। সাধারণত বিএনপি ও তার মিত্ররা হরতাল কর্মসূচি দিয়েছে।

খিচুড়িভোজ : বিএনপির অবরোধে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ‘শান্তি সমাবেশের’ কথা বলে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয়। পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও নেতা-কর্মীরা থাকেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের জন্য খাবারের আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বেলা একটার দিকে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। তফসিল ঘোষণার পরদিন নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি বেড়েছে। আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমদ মনাফি, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরসহ নগরের শীর্ষ নেতাদের অবস্থান কর্মসূচিতে দেখা যায়।

কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের জন্য খাবারের আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। একটি ‘পিকআপ ভ্যানে’ বড় বড় পাতিলে করে খিচুড়ি আনা হয়েছে। সারিতে দাঁড়িয়ে প্লাস্টিকের থালায় খাবার নিচ্ছেন নেতা-কর্মীরা। নেতা-কর্মীদের সুশৃংখলভাবে খাবার গ্রহণ করতে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের দপ্তর সম্পাদক আলিম বেপারী। তিনি বলছিলেন, পর্যাপ্ত খাবার রয়েছে। কেউ হুড়োহুড়ি করবেন না। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ও আশপাশে এ সময় পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়নি।

নয়াপল্টনে ঝুলছে তালা : অন্যদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে তালা ঝুলছে। ওইদিন সহিংসতা শুরুর পর বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশের অভিযানে প- হয়ে যায়। পরদিন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হন দলের কেন্দ্রীয়, জেলা ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের অনেকে। প্রায় সব নেতা এখন আত্মগোপনে। দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছে। মহাসমাবেশ প- হওয়ার পর থেকে বিএনপির কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। ২৯ অক্টোবর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট কার্যালয়ের সামনে ‘ডু নট ক্রস—ক্রাইম সিন’ লেখা হলুদ টেপ দিয়ে বিএনপি কার্যালয়ের ফটকের তিন দিক ঘিরে আলামত সংগ্রহ করে। দুই দিন পর কার্যালয়ের দুই পাশে কাঁটাতারের ব্যারিকেড বসায় পুলিশ। গত মঙ্গলবার দুই পাশের কাঁটাতারের ব্যারিকেড সরিয়ে নেওয়া হয়। এ সময় পুলিশ দাবি করে বিএনপির অফিসে পুলিশ তালা ঝুলায়নি। অন্যান্য সময়ের মতো পুলিশ প্রহরা বসিয়েছে। তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, গ্রেপ্তার আতঙ্কে কার্যালয়ে কেউ যাচ্ছেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে নয়াপল্টনে গিয়ে দেখা যায়, বিএনপি কার্যালয়ের মূল ফটকে এখনো তালা ঝুলছে। কার্যালয়ের সামনে সড়কে সতর্ক অবস্থান নিয়ে আছেন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘোরাঘুরি করছেন।

২৮ অক্টোবরের পর আলোচনায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের চিঠি ফটকের ভেতরের অংশের একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেখানে আরও কিছু চিঠি পড়ে রয়েছে। সামনের সড়কে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দেখা যায়, বিএনপির কার্যালয়ের সামনে কোনো যানবাহনকে দাঁড়াতে দিচ্ছে না পুলিশ।

বিএনপির কার্যালয় লাগোয়া হোটেল ভিক্টোরির নিরাপত্তাকর্মী আবদুল আহাদ বলেন, কার্যালয়ে বিএনপির কেউ আসেন না। ২৮ অক্টোবরের আগে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নেতা-কর্মীরা উপস্থিত থাকতেন।

গুলশান কার্যালয়েও কেউ নেই: গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে সরেজমিন দেখা যায়, মূল ফটকে তালা নেই। পুলিশ সদস্যদেরও দেখা যায়নি। তবে আশপাশে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা রয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নেতা-কর্মীরা কেউ যান না। তাই নিরাপত্তারক্ষীদের ফটকও খুলতে হয় না।

বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের মূল ফটকের ভেতরের অংশে দুজন নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁদের একজন মো. আলিম। কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের কেউ আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে কার্যালয়ে কেউ আসেননি। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে নিয়মিত আসতেন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার। তিনিও আসছেন না। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনি কি গ্যারান্টি দিতে পারবেন, গুলশান কার্যালয়ে গেলে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না? গুলশান কার্যালয় কেন, নেতা-কর্মীরা তো এখন ঘরেও থাকতে পারেন না। যে কারণে কেউ যাচ্ছেন না।

সর্বশেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ০১:৫৫
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও