জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪

সব দলকে নির্বাচনে আসার আহ্বান রাতের অন্ধকারে না, ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন : প্রধানমন্ত্রী

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্স :

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অস্ত্র হাতে রাতের অন্ধকারে না, ভোটের মধ্যে দিয়ে সরকার গঠন হবে। সব সময় আমাদের লক্ষ্য ছিল জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা। গত শুক্রবার বিকেলে তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয়ে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভায় তিনি এ কথা বলেন। এ সময় সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা হয়েছে, সবাই আসেন, ইলেকশনে অংশগ্রহণ করেন, ইলেকশনে জনগণের কাছে গিয়ে জনগণের ভোট চান। এর আগে বিকেল ৩টায় আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভা শুরু হয়। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করেন।

দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এখন নির্বাচন যেন যথাসময়ে সুষ্ঠুভাবে হয় সে জন্য জনগণ ও দেশবাসীর সহযোগিতা আমি চাই। তফসিল ঘোষণার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ধন্যবাদ জানাই আমাদের নির্বাচন কমিশনকে। তারা অন্তত এ জ্বালাও পোড়াও এ ভীত না হয়ে, সাংবিধানিক নিয়ম মেনে সময় মতো নির্বাচন সিডিউল ঘোষণা দিয়েছেন।

বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই যে অপরাধ করেছেন জনগণের কাছে, বিশেষ করে জামায়াত-বিএনপি, অগ্নিসংযোগ করে জনগণকে হত্যা ও জানমালের ক্ষতি করেছেন, সে জন্য জাতির কাছে মাফ চেয়ে তারপর নির্বাচনে আসেন সেটাই আমরা চাই। নির্বাচনের দরজা সবার জন্য উন্মক্ত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন জনগণের অধিকার, এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। সময় এসেছে নির্বাচন হবে। জনগণ ভোট দেবে। কারো যদি সাহস থাকে এসে ইলেকশন করবে। জনগণের ভোট পাওয়ার আস্থা থাকে তাহলে ভোট পাবে। জনগণ যাকে ভোটে নির্বাচিত করবে সেই সরকার গঠন করবে।

কেউ নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আগুন নিয়ে খেলছে। বিএনপি এবং তাদের যে জোট আছে তাদের শুধু একটা কথা বলবো। এই আগুন নিয়ে খেলা এটা বাংলাদেশের মানুষ কখনও মেনে নেবে না। (অতীতে) তারা নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছে, এটাও তারা বানচাল করতে পারবে না।

বিএনপি-জামায়াত জনগণের ওপর আস্থা রাখতে না পেরে হামলা চালাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা সাধারণ মানুষ হত্যা করার পরিকল্পনা করে তাদের মানুষ কেন ভোট দেবে? তাদের ওপর মানুষ কেন আস্থা রাখবে? আস্থা রাখে না। মানুষ তাদের বিশ্বাস করে না, তারা ঘাতক চিহ্নিত। তারা ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত। সেটা তো মাথায় রাখতে হবে।

বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনকারীদের হুঁশিয়ার করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যারা নির্বাচন বানচালের জন্য অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে এদের কিন্তু ক্ষমা নেই। বিএনপি-জামায়াতের হাত থেকে দেশবাসীকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা সন্ত্রাস করছে তাদের ধরিয়ে দিন। যারা অগ্নিসন্ত্রাস করবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবার আর কোনো ছাড়াছাড়ি নেই।

আওয়ামী লীগের ওপর জনগণের আস্থা আছে জানিয়ে দলটির সভাপতি বলেন, আমরা মানুষের সেবা করেছি বলেই আমাদের ওপর মানুষের সমর্থন আস্থা-বিশ্বাস রয়েছে। আজকে যদি সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করা হয় কোন দলের ওপর তাদের আস্থা আছে, সেটা আওয়ামী লীগের ওপরেই আছে আমাদের ওপরই আছে। সে আস্থা বিশ্বাস ধরে রেখে আমাদের এগোতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারে আসার পর থেকে একের পর এক নির্বাচন হয়েছে। এখানে নানা ধরনের অনিয়ম দেখেছি। যখনই আমরা সুযোগ পেয়েছি সেগুলো সংশোধন করে জনগণের ভোটের অধিকার যাতে নিশ্চিত হয়, তার ব্যবস্থা করেছি। নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটি আইন পর্যন্ত করে দিলাম। আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে।

তিনি বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’ এই স্লেøাগান দিয়ে আমরা মানুষকে তাদের ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করি এবং ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করি। তিনি আরো বলেন, জনগণের যে ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ছিল, আমরা সেই ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি। আওয়ামী লীগ ও আমাদের যে দলগুলো নিয়ে জোট করি, সে জোটের মাধ্যমে ফিরিয়ে দিয়েছি। প্রথমে পাঁচ বছর ক্ষমতা, তখন ছিলাম দেশের অনেক অগ্রগতি করেছিলাম। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেশের স্বার্থ বিক্রি করতে চায়নি বলে ক্ষমতা আসতে পারেনি। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। তার পর থেকে বাংলাদেশ একটি জঙ্গি, দুর্ণীতির দেশ এবং আরও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে উপনীত হয়। সে সব প্রতিঘাত পার হয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি আসন পায়। সেবার বিএনপি আসন পেয়েছিল মাত্র ৩০টি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুপরিকল্পনা নিয়ে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনায় শুরু করি। কারণ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ একমাত্র রাজনৈতিক দল… যারা অর্থনৈতিক নীতিমালা সেটিও আমরা নতুনভাবে গ্রহণ করি যে, আমরা সরকারে গেলে কীভাবে এ দেশের উন্নতি করব। আমাদের উন্নয়নের পরিকল্পনা সব সময় তৃণমূল মানুষদের কথা মাথায় রেখে করা হয়।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় লোক লাভবান হবে মিলিটারি ডিটেক্টররা ক্ষমতা আসলেই এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করত। তারা কিছু এলিট শ্রেণি তৈরি করে তাদের হাতে ব্যবসা-বাণিজ্য, ধন-সম্পদ তুলে দিয়ে তাদের ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করত। তবে আমাদের লক্ষ্য সেটি ছিল না। আমাদের লক্ষ্য ছিল জনতার ক্ষমতায়ন। গ্রাম পর্যায়ের মানুষ যেন ক্ষমতা পায় সেই ব্যবস্থাটাই করা।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালার বিরাট পরিবর্তন আমরাই নিয়ে আসি। যেটা আমাদের সংবিধানের ১৩ নম্বর অনুচ্ছেদ… যে সংবিধান জাতির পিতা স্বাধীনতার পর মাত্র নয় মাসের মধ্যে প্রণয়ন করেন এবং পরে দশ মাসের মধ্যে যে সংবিধান কার্যকর হয়। এই সংবিধানের ১৩ নম্বর অনুচ্ছেদে আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালা স্পষ্ট ছিল যে, জাতীয়করণ হবে।

তিনি বলেন, এর মানে হলো সরকারি, সমবায় ও বেসরকারি এই তিনটি খাতকে গুরুত্ব দেওয়া। সেটি অনুসরণ করেই আমরা অর্থনৈতিক খাতের নীতিমালা প্রণয়ন করি। আমরা সরকারে আসার পর সেই ঠিক সেভাবে বাস্তবায়ন শুরু করি এবং ব্যাপক হারে বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেই। আমার লক্ষ্য একটাই ছিল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা… যেন মানুষ কাজ পায় ও করার সুযোগ পায়।

আওয়ামী লীগ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির এই প্রথম সভায় কমিটির সদস্য সচিব ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ‘দ্বিতীয় ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট’-এ অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় শেখ হাসিনা সংঘাতের অবসান ঘটাতে বিশ্বনেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জাতিগুলোর মধ্যে আস্থার ঘাটতি এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব ইউরোপে চলমান যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনকে গণহত্যার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, যুদ্ধরত দেশগুলো এবং জড়িত আন্তর্জাতিক নেতাদের মধ্যে সত্যিকারের আস্থা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করা জরুরি। তিনি বলেন, আজকের শীর্ষ সম্মেলনের থিম, ‘সবার সাথে সকলের প্রবৃদ্ধির জন্য সকলের বিশ্বাসের সঙ্গে সবচেয়ে সময়োপযোগী কারণ, আমাদের বিশ্ব আজ যে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, তা হলো ‘বিশ্বাসের ঘাটতি’।

নানা সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্বের অসহনীয় দারিদ্র্য, অবাঞ্ছিত বৈষম্য, অসহনীয় সন্ত্রাসবাদ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়মূলক হুমকি আছে। এ ছাড়া গ্লোবাল সাউথের জনগণের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ এবং ক্রমবর্ধমান দুর্ভোগ হিসেবে এখন নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, এই সংকটময় মুহর্তে বিশ্বকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং ‘প্রত্যেকের প্রবৃদ্ধি’ অর্জনের জন্য ‘প্রত্যেকের বিশ্বাস’ শক্তিশালী করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নির্মম হত্যাযজ্ঞের মুখে অসহায় ফিলিস্তিনিদের মর্মান্তিক, অমানবিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এখন সময় আমাদের সবার এক বিশ্ব হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং সংঘাতের অবসান করার।

সর্বশেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ০১:৪৫
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও