জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪

‘স্যাংশন দেয়া দেশ থেকে কিচ্ছু কিনবো না’

মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্স :

পৃথিবীর কোনো দেশ স্যাংশন দিলে তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশ কিছু কিনবে না বলে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি বলেছেন, এখন আবার ওই স্যাংশন দেওয়ার একটা প্রবণতা বেড়েছে। যাদের দিয়ে সন্ত্রাস দমন করি, জঙ্গী নির্মূল করি, তাদের ওপর স্যাংশন। আমি বলে দিয়েছি, যে দেশ স্যাংশন দেবে তাদের কাছ থেকে আমি কিচ্ছু কিনবো না। গতকাল শনিবার রাজধানীর রমনায় ‘ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) ৬০তম কনভেনশন’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নিজের অবস্থানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ওরা আমার কী করবে? বাবা-মা, ভাই-বোন সব মেরে ফেলে দিয়েছে। আমার তো হারাবার কিছু নেই। কিন্তু আমি আমার দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

উল্লেখ, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের র‌্যাবের ৬ জন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার উপর স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দিয়েছে। দীর্ঘ দেড় বছর চেস্টা করেও সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করানো সম্ভব হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতো। আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন করতে চাই। উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি আপনাদের (প্রকৌশলী) হাতে, এটা মনে রাখতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন।

দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে প্রকৌশলীসহ সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করবো, আগামীতে এই উন্নয়নের ধারাটা যেন চলমান রাখতে পারি। সেই বিষয়ে সবাই আন্তরিক থাকবেন। সেভাবে আপনারা কাজ করবেন।

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই, যেখানে জনগণ হবে স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট উৎপাদন ব্যবস্থা থাকবে। চিকিৎসা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে দেশের মানুষ স্মার্ট হবে, সেটাই আমরা চাই। দক্ষ জনগোষ্ঠী আমরা গড়ে তুলতে চাই। কোনও জায়গা থেকে আমরা পিছিয়ে থাকবো না।

প্রকৌশলীদের দেশের মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যে যেখানে কাজ করবেন নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে, আত্মমর্যাদা বোধ নিয়ে, দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে কাজ করতে হবে।

কোন প্রকল্প দেশের মানুষের জন্য কতটা প্রয়োজন তা বিবেচনা করে সরকার প্রকল্প গ্রহণ করে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নে আমরা যে প্রকল্প নিই, আগে চিন্তা করি দেশের মানুষ কতটুকু উপকার পাবে। আর সেই প্রকল্প শেষ হয়ে গেলে রিটার্ন কী আসবে। কত দ্রুত আসবে। কোনও দেশ বিশাল অঙ্কের টাকা দিয়ে কোনও প্রকল্প দিলে আমি কিন্তু সেই প্রকল্প গ্রহণ করি না। সেটা আপনাদের আমি জানিয়ে দিচ্ছি। সেটা আমি করবোও না। আমার দেশের জন্য প্রযোজ্য যেটা আমরা সেটাই করবো।

সামরিক শাসকদের সময় প্রকল্পের নামে টাকা লুট হতো জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, একসময় সামরিক শাসকদের সময় কী ছিল, অনেক টাকা দিয়ে প্রজেক্ট বানায়। ওই টাকা পরের কাছে তুলে দেওয়া এবং তাদের কাছে কমিশন খাওয়া! আমার দেশের টাকা আমি তুলে দেবো আরেকজনের হাতে? আর তার কাছ থেকে আবার কমিশন খাবো? ঘুষ নেবো? এই ধরনের মানসিকতা কেন থাকবে! এটা তো আত্মহননের শামিল। বরং একটা টাকা বাঁচাতে পারি কিনা, সেই চেষ্টাটাই করতে হবে।’

অনেক দেশ পদ্মা সেতুর মতো সেতু নির্মাণে বাংলাদেশের সহযোগিতা চায় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে আমাদের সক্ষমতা শুধু দেখাইনি, আমাদের যারা সেখানে কাজ করেছেন, আমাদের প্রকৌশলী থেকে শুরু করে সবারই নিজস্ব অভিজ্ঞতা সৃষ্টি হয়েছে। এখন যেমন অনেক দেশ আমাদের কাছে আসছে, ব্রাজিল তাদের অ্যামাজনে ব্রিজ বানাতে চায়। আমরা বলেছি, আমাদের লোকজন রেডি আছে, যখনই দরকার আমরা সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত।

সারাদেশের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার যে উন্নয়ন করেছে তা রাজধানী কেন্দ্রিক নয়। আমরা গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত উন্নয়ন করেছি। সরকার বিদুৎ সরবরাহ, যোগাযোগ ব্যবস্থার মানোন্নয়ন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হওয়ায় গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে অভিবাসনের প্রবণতা কমেছে।

সারাদেশে শতাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বিচারে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে দেওয়া হবে না। আমরা শিল্পায়নের জন্য বিশেষ অঞ্চল সৃষ্টি করেছি। যেখানে সব ধরনের সেবা পাওয়া যাবে। খাদ্য উৎপাদন অব্যহত রাখতে আমাদেরকে আবাদী জমিকে রক্ষা করতে হবে। দেশে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও কৃষিখাতে দীর্ঘ সময় ধরে ভর্তুকি দেওয়া হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এই ভর্তুকির পরিমাণ কমাতে হবে। এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।

আইইবির প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. নুরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন আইইবির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. শাহাদাৎ হোসেন (শিবলু), আইইবি ঢাকা সেন্টারের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোল্লা মোহাম্মদ আবুল হোসেন, সম্মানী সম্পাদক প্রকৌশলী কাজী খায়রুল বাশার প্রমূখ। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন স্তরের প্রকৌশলী, কেন্দ্র, উপ-কেন্দ্র, প্রকৌশল বিভাগ ও এএমআরই বিভাগের স্নাতকদের হাতে পুরস্কার (স্বর্ণপদক) ও সনদপত্র তুলে দেন।

সর্বশেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২৩, ০১:১৩
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও