আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করাটা ‘চ্যালেঞ্জ’ হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নানামুখী ষড়যন্ত্রের কারণে আগামী নির্বাচনটা চ্যালেঞ্জের হবে। কারণ দেশ-বিদেশে নানা ধরনের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র হচ্ছে। গতকাল সোমবার গণভবনে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ আহ্বান জানান। এ সময় তিনি নেতাকর্মীদের সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচন, নির্বাচন একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। যারা বাংলাদেশের বদনাম করে তাদের কুলাঙ্গার। বাংলাদেশের মানুষের জীবন যখন একটু উন্নত হয়, তখনই বাংলাদেশেরই কিছু কুলাঙ্গার আছে যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সব জায়গায় বদনাম করে বেড়ায়, মিথ্যা বলে বেড়ায়। আর কিছু আছে বিদেশি অনুদানের টাকা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাসই করেনি, যারা গণহত্যা চালিয়েছে, লুটপাট করেছে, নারী ধর্ষণ, নির্যাতন করেছে, তারা আছে, তাদের আওলাদ আছে, তারা সারাক্ষণ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেই যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, যারা স্বাধীনতার সময় আমাদের সমর্থন করেনি, তাদের কাছেই তাদের সব আত্মীয়তা। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে দুর্ভাগ্য।
নির্বাচনে কারচুপি করা বিএনপির অভ্যাস মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ভোট চুরি করা এটাই তাদের (বিএনপি) রেকর্ড। গণতন্ত্র হরণ করা এটাই তাদের রেকর্ড। তো ওদের মুখে এখন আবার আমরা গণতন্ত্র শুনি।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা (বিএনপি) মিলিটারি ডিকটেটরের হাতে তৈরি দল, তাদের কাছে গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয়। তাদের কাছে ভোটের কথা শুনতে হয়। তো চুরি করা যাদের অভ্যাস, সেই চোরদের কাছে বাংলাদেশের জনগণ কী শুনবে, কী দেখবে। ২০০১ সালের নির্বাচনেও তো কম কারচুপি হয়নি। ১৯৯৬ সালে এই খালেদা জিয়াকেই বাংলাদেশের মানুষ ভোটচুরির অপরাধে বিতাড়িত করেছে। আবার ২০০৬ সালে নির্বাচনে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটচুরি করতে গেছে। তখনও জনগণের আন্দোলনেই তাদের বিদায় নিতে হয়েছে।
আওয়ামী লীগকে আরো শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সংগঠনটা (আওয়ামী লীগ) যথেষ্ট শক্তিশালী। সংগঠনটা যেন আরো মজবুত থাকে, ব্যবস্থা নিতে হবে।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ত্যাগের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দিনের পর দিন কারাবরণ, অত্যাচার, নির্যাতন, তারপর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, মুক্তিযুদ্ধ করে যুদ্ধাহত হয়ে বাংলাদেশের পুনর্গঠন কাজ- এখানে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা, স্বাধীনতার ইতিহাস মুছে ফেলা, জয় বাংলা মুছে ফেলা, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ইতিহাস মুছে ফেলার অনেক অপচেষ্টা করা হয়েছে। আসলে সত্য এক সময় না এক সময় উদ্ভাসিত হবেই। সত্য কেউ মুছে ফেলতে পারে না। আজ সেটাই হয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ ৭ মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক মর্যাদা পেয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে। জয় বাংলা সেøাগান আবার ফিরে এসেছে।
বিগত সাড়ে ১৪ বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আল্লাহর রহমতে এইটুকু করতে পেরেছি, এই ১৪ বছরে, ২০০৮ সালে সরকারে আসার পর, এই একটানা ক্ষমতায় থাকার ফলে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ আছে বলেই আজ বাংলাদেশের এই উন্নতিটা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা কিন্তু এই কয়েক বছরে বাংলাদেশকে বদলে দিতে পেরেছি। আজ কিন্তু সেই ভিক্ষুকের জাতি বলে বাংলাদেশকে কেউ আর অবহেলা করতে পারবে না। এই জায়গাটা থেকে বাংলাদেশকে উত্তরণ ঘটিয়ে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের তৈরি হতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে। এটাকে আমাদের স্থায়ী করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, যেকোনো দুর্যোগে-দুর্বিপাকে আওয়ামী লীগই কিন্তু মানুষের পাশে থাকে। এটাও প্রমাণিত, যেকোনো সময় আওয়ামী লীগ মানুষের কাছে থাকে। তিনি আরো বলেন, দেশের বাইরে গেলে সবাই বাংলাদেশের উন্নয়ন বিষয়ে আমাকে বলে, আপনার ম্যাজিকটা কী। আমি বলি ম্যাজিক কিছু নাই ওখানে। আমার শক্তিশালী সংগঠন আছে। আর আমাদের সংগঠনের শক্তিশালী নীতিমালা আছে। আমাদের একটা লক্ষ্য আছে, একটা পরিকল্পনা আছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে, জনগণকে নিয়ে উন্নয়নের কাজ করি বলেই আমরা সাফল্য আনতে পেরেছি।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত নেতারা গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। মানুষ যেন ন্যায় বিচার পায় সে ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে। স্বল্প সময়ে বিনা ভোগান্তিতে মানুষ যাতে বিচার পায়, সে জন্য আমাদের সরকার বিচারব্যবস্থাকে ডিজিটাল করে দিয়েছে। করোনা মহামারির সময়ে ভার্চুয়াল করে দিয়েছি, যাতে মানুষ ঘরে বসেই স্বল্প সময়ে বিচার পায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্যে দিয়ে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে গুম খুনের ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করে। জাতির পিতার হত্যার পর আমার বিচার চাওয়ার, বিচার পাওয়ার অধিকার ছিল না। এটা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। সেই বিচার না পাওয়ার অবস্থা থেকে আজ দেশকে মুক্ত করতে পেরেছি। আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান তাপদাহ পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের কারণে মানুষের কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।
দেশে ধারাবাহিক গণতন্ত্র আছে বলেই গত সাড়ে ১৪ বছরে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৪ বছরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। আমরা বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছি।
এদিকে গতকাল সকালে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী গণভবন প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করেন। পরিবেশ মেলা-২০২৩, জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০২৩-এর উদ্বোধনের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তিনটি চারা রোপণ করেন। এ সময় দেশের প্রত্যেক জনগণকে গাছ লাগাতে উদ্ধুদ্ধ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমি গাছ লাগিয়েছি। আমি আশা করি- বাংলাদেশের সবাই (জনগণ) এটি অনুসরণ করবেন।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমি দেশের প্রতিটি তিনটি গাছ লাগাতে অনুরোধ করতে চাই এবং যদি তা সম্ভব নাও হয়, তবে অন্তত একটি গাছ লাগান। তিনি শিক্ষার্থীদের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে গাছ লাগাতে বলেন।
প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষায় বৃক্ষরোপণ করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষায় সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। আমি চাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ যেন কোনো ক্ষতির সম্মুখীন না হয়। তাই সবাইকে গাছ লাগাতে বলছি।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ যাতে আরও সুন্দর, সবুজ ও উন্নত হয় সে জন্য তারা ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন।
বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে ফলমূল, শাকসবজি ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনের জন্য প্রতিটি স্থানে গাছ লাগাতে এবং প্রতিটি এলাকাকে উৎপাদনের আওতায় আনতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বব্যাপী উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক উন্নত দেশও হিমশিম খাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের জনগণকে সংকট থেকে রক্ষা করতে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অন্তত তিনটি বনজ, ফলদ ও ভেষজ চারা রোপণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি জানান, তাঁর দল বিগত বছরের মতো এবারও আষাঢ় মাসের প্রথম দিনে বৃক্ষরোপণ অভিযান শুরু করবে।
এ সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পরিবেশ মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন, পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সর্বশেষ আপডেট: ৬ জুন ২০২৩, ০২:১৫
পাঠকের মন্তব্য