মৌলভীবাজারে এনসিপির সমন্বয় কমিটি বাতিলের দাবিতে উত্তাল জনতা; প্রীতম দাসকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা

বিশেষ প্রতিবেদকঃ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয় কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে জেলায় তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। গত ১৮ জুন ৩১ সদস্যের কমিটি অনুমোদনের পর থেকেই সাধারণ ছাত্র-জনতা ও আন্দোলনকারীরা এটিকে ‘পকেট কমিটি’ ও ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিতর্কিত এ কমিটির বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতে ব্যাপক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব প্রীতম দাসকে জেলায় ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়।  

ছবি মুক্তিবাণী

প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় কর্মীরা অংশ নেন। বক্তারা অভিযোগ তোলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সাথে যুক্ত সংগঠকদের কোনো আলোচনা ছাড়াই রাতের অন্ধকারে বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এনসিপির আড়ালে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন এবং জুলাই বিপ্লবের চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে প্রীতম দাসের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। ছাত্র নেতা রিফাত আহমেদের বক্তব্য, “প্রতিবাদকারী ছাত্রদের মামলা ও হামলার হুমকি দিয়েছেন প্রীতম দাস। এই কমিটি আমাদের জন্য অগ্রহণযোগ্য।”

ছবি মুক্তিবাণী

অনুমোদিত তালিকায় প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পেয়েছেন ফার্মেসি ব্যবসায়ী খালেদ হাসান। ৯ জন যুগ্ম সমন্বয়কারীর মধ্যে রয়েছেন ফাহাদ আলম, এহসান জাকারিয়া, মো. ইকবাল হোসেন, রুমন কবির প্রমুখ। সদস্যদের তালিকায় এডভোকেট কৌশিক দে, জাহাঙ্গীর আলম, ভীমপল সিনহাসহ ২১ জনের নাম রয়েছে।

ছবি মুক্তিবাণী

তবে তালিকা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় ওঠে। ছাত্ররা প্রমাণসহ দেখান, যুগ্ম সমন্বয়কারী ফাহাদ আলম ও সদস্য বৈশাখ গোয়ালা সরাসরি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাথে যুক্ত। আওয়ামী লীগের সমাবেশ, নির্বাচনী কর্মসূচিতে তাদের উপস্থিতির ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়। স্থানীয় কর্মী আরিফুল ইসলামের প্রশ্ন, “আমরা বিগত আন্দোলনে যাদের দেখিনি, তারাই আজ এনসিপির নেতা? কমিটির ৮০% সদস্য আমাদের অপরিচিত!”

নতুন প্রধান সমন্বয়কারী খালেদ হাসান নিজেকে ‘অরাজনৈতিক ব্যবসায়ী’ দাবি করে বলেন, “কমিটির অধিকাংশ সদস্য ব্যাংক-বীমা ও ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগ সম্পৃক্ততার অভিযোগ আমার জানা নেই, কেন্দ্রীয় কমিটি নামগুলো যাচাই করে অনুমোদন দিয়েছে।” তবে তার এ বক্তব্য জেলার তৃণমূল কর্মীদের অসন্তোষ আরও বাড়িয়েছে।

জুলাই বিপ্লবের স্বপ্ন ভঙ্গের আশঙ্কা: গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখা ব্যক্তিরা এই কমিটিতে একেবারেই অনুপস্থিত। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, “এনসিপিতে এখন ব্যবসায়ী ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হচ্ছে। দলটি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।”

ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে ৪টি দাবি উত্থাপন করা হয়েছে:

১. অবিলম্বে বিতর্কিত সমন্বয় কমিটি বাতিল করতে হবে।

২. জুলাই আন্দোলনের সংগঠক ও স্থানীয় স্বীকৃত নেতাদের নিয়ে পুনর্গঠন করতে হবে।

৩. আওয়ামী লীগ-সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের দল থেকে বহিষ্কার করতে হবে।

৪. প্রীতম দাসের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের স্বাক্ষরিত এই কমিটি আগামী তিন মাস জেলা দায়িত্ব পালন করবে বলে জানানো হলেও স্থানীয় পর্যায়ে দলের ভাবমূর্তি ও সংগঠনিক ভিত্তি মারাত্মক সংকটে পড়তে চলেছে বলে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা।

মৌলভীবাজারে এনসিপির অভ্যন্তরীণ এই সংকট দ্রুত জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। জুলাই বিপ্লবের আদর্শে বিশ্বাসী তরুণ ও সাধারণ মানুষের মনোস্তাত্ত্বিক দূরত্ব বাড়লে দলটির ভবিষ্যৎ কৌশলগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

সর্বশেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২৫, ১০:৩৭
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও