মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংকট, বিশেষ করে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আক্রমণ এবং ইরানে বিনা উস্কানিতে মার্কিন হামলার প্রতিবাদে মৌলভীবাজার শহরের দেওয়ানী মসজিদের সম্মুখে ‘সচেতন নাগরিক সমাজ, মৌলভীবাজার’ এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় এক প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন। এতে অংশ নেন এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাবেক ব্যাংকার, ধর্মীয় নেতা ও পেশাজীবীরা।
উক্ত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন , সচেতন নাগরিক সমাজ মৌলভীবাজারের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমদ মম। তিনি বলেন, “এই আন্দোলন শিয়া-সুন্নির নয়, মানবতার। আমরা মুসলিম জাতির ঐক্য চাই। ফিলিস্তিনের নিরীহ মুসলমানদের উপর বর্বরোচিত হামলা কোনো সভ্য সমাজ মেনে নিতে পারে না। ইসরাইলের হাতে ১০০ পারমাণবিক বোমা, অথচ তাদের কোনো প্রশ্ন করা হয় না; অথচ ইরানকে দোষী করে পারমাণবিক ইস্যুতে চাপে রাখা হচ্ছে।”
সভাপতি আরো বলেন, “আরব রাষ্ট্রগুলো নিজেদের আত্মসমর্পণ করেছে পশ্চিমা শক্তির কাছে। অথচ তারা জানে না, একদিন তারাই এই আগ্রাসী শক্তির শিকার হবে।”
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ফজলুল আলী, সাবেক ব্যাংকার ড. আবু তাহের, দেওয়ানী মসজিদের খতিব সৈয়দ মুহিত উদ্দিন, বায়তুল আমান মসজিদের খতিব মাওলানা শেখ মোঃ আব্দুল হক, পাবলিক লাইব্রেরীর নির্বাহি সদস্য সৈয়দ রুহুল আমিন, কবি সুফি চৌধুরী, সাবেক ব্যাংকার ফরিদ চৌধুরী, শিক্ষক আব্দুল বাছিত এবং সাপ্তাহিক ‘মনুবার্তা’ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালেহ এলাহি কুটি।
এ সময় বক্তারা বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, “মিয়ানমার, ভারত, আরাকান আর্মি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য সামরিক শক্তির কারণে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ছে। বাংলাদেশ যদি প্রয়োজনীয় সামরিক সক্ষমতা অর্জন না করে, তবে ভবিষ্যতে স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে।”
মানববন্ধনে ২-৩ শতাধিক সচেতন নাগরিক উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সচেতন নাগরিক সমাজ মৌলভীবাজারের সদস্য সচিব মোহাম্মদ সেলিম।
প্রসঙ্গত, সভায় সম্প্রতি ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের কন্যা রাগদ সাদ্দামের বক্তব্যও উদ্ধৃত হয়। যেখানে তিনি ইরানের জনগণকে আহ্বান জানান তাদের দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় সোচ্চার হতে।
প্রবাসী স্বজন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’র সভাপতি, সাংবাদিক নুরুল ইসলাম শেফুল বলেন, “আমেরিকা আজ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পথ অনুসরণ করছে—বিশ্বব্যাপী সামরিক ঘাঁটি স্থাপন ও প্রভাব বিস্তার তাদের মূল লক্ষ্য। তেল ও সম্পদ লুণ্ঠনের জন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে বিভক্ত ও দুর্বল করাই তাদের কৌশল।”
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট: গাজা, পশ্চিম তীর, ইরান, ইরাক ও লিবিয়ায় সাম্প্রতিক বছরের পশ্চিমা সামরিক হস্তক্ষেপ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা বাড়ছে। জাতিসংঘ, ওআইসি (ইসলামিক কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন) ও অন্যান্য সংস্থা যথেষ্ট দৃঢ় ভূমিকা রাখছে না বলে অভিযোগ রয়েছে অনেক দেশের মানবাধিকার সংগঠনের।
বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ এশিয়াও ক্রমশ ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্র হয়ে উঠছে। ভারতের সামরিক প্রস্তুতি, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি এই অঞ্চলে নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
সংক্ষিপ্ত বার্তা: “ফিলিস্তিন-ইরান সংকটে বিশ্ব বিবেক নীরব, মৌলভীবাজারে মানববন্ধনে বক্তাদের আহ্বান— মুসলিম বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ হোক।”
এস. এম. মেহেদী হাসান
সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশ্লেষক
দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও মানবাধিকার বিষয়ে লেখালেখি করেন। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তার বিশ্লেষণমূলক লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য