বাংলাদেশের ভঙ্গুর শিক্ষাব্যবস্থার এক নির্মম ছবি “শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড”—শৈশব থেকে মুখস্থ করা এই বাণী আজ কি নিছক সান্ত্বনা বাক্য? স্বাধীনতার পর কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন যে নৈতিক, সৃজনশীল ও জীবনমুখী শিক্ষার স্বপ্ন দেখিয়েছিল, তার বাস্তবায়ন কি সত্যিই হয়েছে? নাকি সেই স্বপ্নই আজ ভেঙে যাচ্ছে?
কোথায় সেই ‘সোনার মানুষ’? একসময় লক্ষ্য ছিল চরিত্রবান, নৈতিকতাসম্পন্ন “সোনার মানুষ” তৈরি। অথচ আজ:
ডিগ্রির মোহ, জ্ঞানের অভাব: মাধ্যমিকে পাসের হার ৯৫%, কিন্তু বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, ৭৫% শিশু সহজ পাঠ বুঝতে পারে না। এ+ পেলে জ্ঞানী হওয়া যায়—এই বিভ্রমে সমাজ ডুবে গেছে।
নৈতিক শিক্ষার সংকট: টিআইবি বলছে, ৮৯% মানুষ মনে করেন শিক্ষা খাতে দুর্নীতি আছে। কোচিং, নোট-গাইড নির্ভরতা, প্রশ্নপত্র ফাঁস—এসবই যেন স্বাভাবিক ঘটনা।
কর্মমুখী শিক্ষার অভাব: বিআইডিএস জানায়, শিক্ষার্থীদের ৬০% মনে করে শিক্ষাজীবন বাস্তব চাকরির বাজারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। ডিগ্রিধারী বেকারের সংখ্যা বাড়ছেই।
ফলাফল? দুর্নীতি ও মূল্যবোধের সংকট যে সমাজে শিক্ষিতরাই শর্টকাট খোঁজেন, সৎ না হয়ে স্মার্ট হতে চান—সেখানে দুর্নীতি অনিবার্য। ড. আহসান এইচ মনসুরের মতে, ফলাফলনির্ভর শিক্ষার কারণে সমাজের নৈতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে গেছে। টিআইবি’র সূচকও তার প্রমাণ।
দায় কার? দোষ শুধু শিক্ষার্থীর নয়। বরং—নীতিনির্ধারকদের অদূরদর্শিতা,
বাজেট ঘাটতি (শুধু ১.৮% GDP),
নিয়োগ-বণ্টনে স্বজনপ্রীতি,
শিক্ষকের প্রশিক্ষণ ও মর্যাদার অভাব,
অভিভাবকের সনদসর্বস্ব মানসিকতা—
সবই দায়ী।
আশার আলো কি নিভে গেছে? একদম না। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর কথায়, “মেরুদণ্ড ভাঙলেও আবার গড়া যায়।” কীভাবে?
নৈতিক শিক্ষার অগ্রাধিকার।
• শিক্ষকের মর্যাদা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা।
• সৃজনশীল ও বিশ্লেষণভিত্তিক শিক্ষার প্রসার।
• কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষার উন্নয়ন।
সুবিধাবঞ্চিতদের শিক্ষা নিশ্চিতকরণ।
• দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা।
বিশ্ব আমাদের পথ দেখায়: ফিনল্যান্ড ও ভিয়েতনাম শিক্ষা সংস্কার করে দেখিয়েছে কেমন বদলে যাওয়া যায়। আমরা পারব না কেন?
উপসংহার: এখনই সময়! আজকের শিক্ষাব্যবস্থা দুর্বল, কিন্তু ভবিষ্যৎ এখনো আমাদের হাতে। জাতির মেরুদণ্ড ভাঙার দায় একক কারও নয়—সমাজের প্রতিটি মানুষকে তা নিতে হবে। এখনই সিদ্ধান্ত—শিক্ষাকে ফের ‘মেরুদণ্ড’ করব, না কি জাতিকে দুর্বল হতে দেব?
আপনার মতামত দিন: এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় কী?
পাঠকের মন্তব্য