টার্গেট নির্বাচন পেছানো!

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্সঃ

দেশে সবার মুখে এখন একটি প্রশ্ন নির্বাচন কি ঝুলে যাচ্ছে? লন্ডনের ঐতিহাসিক বৈঠকের পর রমজানের আগে যে নির্বাচনের বার্তা দেয়া হয়েছিল সেটা কি অধরা থেকে যাচ্ছে? রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের কালোমেঘ? হিন্দুত্ববাদী ভারতের ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের’ চাণক্য নীতির ফাঁদে কিছু রাজনৈতিক দল পড়ে গেছে? বিজ্ঞজনেরা বলছেন, আগামীর দেশ বিনির্মাণে তিনটি শক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এক. রাজনৈতিক দল; দুই. সরকারের অংশ হলেও সেনাবাহিনী; তিন. ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। সেনাবাহিনী নীরব। দেশের স্বার্থে যথাসময়ে নির্বাচনে এই তিন শক্তি প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করতে পারে। ১৯৯১ সাল, ১৯৯৬ সালে ও ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো ক্ষমতা গ্রহণের ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারলে বর্তমানের অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় ঐকমত্য কমিশকে সংস্কার ইস্যুতে মাসের পর মাস সংলাপ চালাতে হবে কেন?

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যাপক সাফল্যের পরও অপ্রিয় হলেও সত্য অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও বিদেশী বিনিয়োগ না আসায় দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মেরুদ- ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। আর সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ ছাড়াও প্রশাসনের বিভিন্ন পদ-পদবি ‘এনজয়’ করা কিছু ব্যক্তির অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতার মেয়াদ দীর্ঘায়িত করতে সংস্কারের বাহানায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ জিইয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে পৌঁছাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ৫ মাস ধরে বৈঠকের পর বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সংকটের সুরাহা হচ্ছে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক নেটিজেন ঐকমত্য কমিশনের প্রতিদিনের বৈঠক নিয়ে বিতর্ক করছেন। কেউ কেউ বলছেন, ‘এ কমিশন যে প্রক্রিয়ায় আলোচনা এগিয়ে নিচ্ছে তাকে কেয়ামত পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা হবে না’। আবার কেউ বলছেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা চেয়ারের মর্যাদায় এনজয় করছেন। আলোচনা সফল হলে তাদের চেয়ার ধ্বসে পড়বে সে জন্য সুকৌশলে মতভেদ জিইয়ে রাখা হচ্ছে’। কেউ বলছেন, ‘কিছু দল দিল্লির ফাঁদে পা দিয়ে নির্বাচন বিলম্বিত করতে অপ্রাসঙ্গিক ইস্যু সামনে আনছে’। কেউ কেউ বলছেন, ‘আওয়ামী লীগকে সংসদে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচনের দাবীতে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন’। আবার কেউ কেউ বলছেন, ‘কিছু উপদেষ্টা এবং কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিজেদের ক্ষমতার ভোগবিলাস দীর্ঘায়িত করতে নির্বাচন পেছানোর কৌশল হিসেবে সংস্কার ইস্যুতে সিদ্ধান্তে কালক্ষেপণ করছেন’। ঐকমত্য কমিশনে সংলাপের নামে অতীতে সংসদের প্রতিনিধিত্ব করেনি এবং ভবিষ্যতেও সে সম্ভাবনা নেই এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার পদে ভোট করে বিজয়ী হতে পারবেন না এমন দলগুলোর নেতাদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়ার নামে আলোচনা দীর্ঘায়িত করছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের সপ্তম দিন গত রোববার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ তিনি বলেছেন, ‘সত্যি কথা হচ্ছে সংস্কার ইস্যুতে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতির ক্ষেত্রে আমরা খানিকটা পিছিয়ে আছি’। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে সংলাপে অংশ নেয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা সবাই আশাবাদী মানুষ। কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা চলছে। তার চাইতে বেশি হয়তো খানাপিনা চলছে’। তিনি আরো বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনে বেশ কিছু বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। এখন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সব প্রস্তাবে যদি আমাদেরকে ১০০ শতাংশ একমত হতে বলে তাহলে আলোচনার জন্য ডাকা হলো কেন? জাতীয় ঐকমত্য পোষণ হলে যে সমস্ত বিষয়গুলোতে দলসমূহ একমত হবে, সেই বিষয়গুলো একত্রিত করে জুলাই সনদ বা জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা। তো এখন এখানে যদি আমাদেরকে বাধ্য করা হয় যে এই সমস্ত বিষয়ে একমত হতেই হবে, সেটা তো সঠিক হলো না’।

দেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। নির্বাচিত সরকার না থাকায় বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আসছে না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকায় অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা। আবার নির্বাচিত সরকার না থাকায় হিন্দুত্ববাদী ভারত একের পর এক ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার অলিগার্করা নানা হুমকি ধমকি দিচ্ছে। এ কারণে বিএনপি স্বল্প সংস্কার করে ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবি করে। কিন্তু ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রনেতাদের মধ্যে কিছু শিক্ষার্থী জাতীয় নাগরিক পার্ট (এনসিপি) গঠন করে সরকারের নানা পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। নতুন দলকে নির্বাচন উপযোগী করতে তাদের সময়ের প্রয়োজন। তারা সংস্কারের অজুহাতে নির্বাচন পেছানোর দাবি করছে। তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে জামায়াত। এ দলটিরও জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে সময়ের প্রয়োজন। এছাড়াও কয়েকজন উপদেষ্টা এবং সংস্কার কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা মনে করছেন নির্বাচন হলেই তাদের হাত থেকে ক্ষমতা চলে যাবে বিএনপির হাতে। কাজেই নির্বাচন যত বিলম্ব করা যায় ততই বেশিদিন ক্ষমতা ভোগ করা যাবে। ঐকমত্য কমিশনের একাধিক সংলাপে অংশ নিয়েছেন এমন একজন নেতা বলেন, ‘চেয়ারের লোভ কার ছাড়তে ইচ্ছে করে? ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি ড. আলী রীয়াজ মার্কিন নাগরিক। ড. শাহদীন মালিক সংবিধান সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করায় তাকে দায়িত্ব দেয়া হলো। অতঃপর সংবিধান সংস্কার কমিশনের পর তাকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার পর তার অবস্থান। প্রায়ই তিনি মিটিং করছেন, আসতে যেতে নেতাদের সালাম পাচ্ছেন, রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন। এমন সুযোগ পেলে কে চেয়ার ছাড়তে চায় বলুন? বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে তিনি সভাপতিত্ব করে থাকেন। তিনি প্রায় সব দলের মতামতকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। যে দল বারবার জনগণের ভোটে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেছে তার প্রতিনিধিদের মতামত এবং প্যাড সর্বস্ব দলের নেতার মতামত তার কাছে সমান। কারণ তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন; দেশের মানুষের চেতনা-মনন বোঝেন না। তবে তিনি সব দলের মতামতের নামে প্যাড সর্বস্ব দলগুলোকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন তাতে আগামীতে বাণিজ্যিক পর্যায়ে রাজনৈতিক দল গঠনের হিড়িক পড়ে যাবে।

অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ১৯৯১ সালে, বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১৯৯৬ সালে এবং বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতা গ্রহণের ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করেছে। তিনটি নির্বাচনই নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। প্রশাসনকে গতিশীল করতে বিচারপতি লতিফুর রহমান একদিনে ২০ থেকে ৩০টি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দলবাজির অভিযোগে চাকরিচ্যুত করেন। অথচ এখন সংস্কারের নামে নির্বাচন ইস্যুতে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার অলিগার্ক আমলাদের চাকরিচ্যুত দূরের কথা তাদের নীল নকশা অনুযায়ী প্রশাসন চলছে। ফলে সংস্কার ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ধীরে চলো নীতি নিয়ে এখনই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার ৮ আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণের পর রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সংবিধান, নির্বাচন, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করে। অতঃপর আরো ৫টি কমিশনসহ মোট ১১টি কমিশন গঠিত হয়। অধিকাংশ কমিশন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। অতঃপর চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে সাত সদস্যের ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠন করা হয়। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান প্রফেসর ড. আলী রীয়াজকে এই কমিশনের সহসভাপতি এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফররাজ হোসেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামানকে সদস্য করা হয়। এ কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই কমিশন ‘পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ’ করবে।

এ কমিশন সংস্কারের ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নিয়ে দলগুলোর কাছ থেকে ছক আকারে মত নেয়। এরপর দলগুলোর সঙ্গে এ কমিশনের আলোচনা ২০ মার্চ থেকে শুরু চলে ১৯ মে পর্যন্ত। অতঃপর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গত ২ জুন দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শুরু করে। এখনো সে আলোচনা চলছে। সূত্রের দাবি ঐকমত্য কমিশনে দলগুলোর সঙ্গে এখন পর্যন্ত ৯টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন, বিরোধী দল থেকে সংসদীয় কমিটির সভাপতি করা, ১০০ নারী আসনে সরাসরি ভোট, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন, প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল (এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ কত সময় প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন) এবং সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি। এর মধ্যে এনসিসির পরিবর্তে ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি’ গঠনের নতুন প্রস্তাব আনা হয়।

এই ৯টি প্রস্তাবের মধ্যে ৭০ অনুচ্ছেদ ও বিরোধী দলগুলোকে আসনের অনুপাতে সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদ দেওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এক ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন, এমন প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মোটামুটি একমত হলেও এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপি বলেছে, সংবিধানে এনসিসি বা এ ধরনের কোনো কমিটি গঠনের বিধান রাখা হবে না, এই শর্ত পূরণ হলে তারা প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকালের বিষয়টি মেনে নেবে। তবে এখনো নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা, সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি, জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রক্রিয়া, স্থানীয় সরকারে নারী প্রতিনিধিত্ব, উচ্চকক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি, জেলা সমন্বয় কাউন্সিল গঠন ইত্যাদি বিষয়ে এখনো আলোচনা শুরু হয়নি।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কয়েকটি সংলাপ পর্যালোচনা করে দেখা যায় সংলাপে বিএনপির মতো দলের সঙ্গে প্যাড সর্বস্ব দলগুলোকে এক পাল্লায় ফেলা হয়েছে। এটা করা হয়েছে মূলত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলগুলোকে গুরুত্ব দেয়ার নামে সংস্কার ইস্যুতে সময়ক্ষেপণ করা। ঐকমত্য কমিশন যে দলগুলোকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে সেগুলোর জনসমর্থন খুবই কম। অতীতের সংসদ নির্বাচনের ভলিউম ঘেঁটে সেটাই দেখা যায়। ’৯০-এর রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের চারটি নির্বাচনকে নির্বাচনের মানদ-ে নিরপেক্ষ ধরা হয়। ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম, ২০০৮ সালের নবম ৪ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বলা হয় নিরপেক্ষ। এই চার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ গড়ে ৩৮.৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে। আসন পেয়েছে গড়ে ১৩১টি করে। বিএনপি গড়ে ভোট পেয়েছে ৩৪.৪৭ শতাংশ, আসন পেয়েছে গড়ে ১২০টি করে। জামায়াত গড়ে ভোট পেয়েছে ৭.৪৩ শতাংশ। আসন পেয়েছে গড়ে ১০টি করে। আওয়ামী লীগ ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮৮ আসন, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ১৪৬ আসন, ৬২ আসন ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে ২৩০ আসন পায়। অন্যদিকে বিএনপি ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ১৪০ আসন, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ১১৬ আসন, ২০০১ সালের নির্বাচনে ১৯৩ আসন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩০ আসন পায়। জামায়াত ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ১৮ আসন, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ৩ আসন, ২০০১ সালের নির্বাচনে ১৭ আসন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ২ আসন পায়। এর বাইরে জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্যদের তেমন আসন গণনার মতো নয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে যে সব দল অংশ নিচ্ছে তার দু’তিনটি দল সংসদে দু’একটি আসন পেলেও ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ দলের কোনো প্রতিনিধি সংসদে ছিল না। যে সব দলের তেমন কোনো ভোট নেই ঐকমত্য কমিশনে সে দলগুলোর মতামতকে অধিক গুরুত্ব দেয়া কি কৌশল হিসেবে নেয়া হয়েছে?

ঐকমত্য কমিশনে টানা সংলাপ ও নির্বাচন বিলম্ব করার কৌশল ইস্যুতে রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘যে ভাবে সংলাপ চলছে তাতে নির্র্বাচন পেছানোর শঙ্কা রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করা না গেলে সেটা আগামী দুই এক বছরের মধ্যে করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। যারা নির্বাচন পেছানোর কৌশল করছেন তারা ছক এঁকেই করছেন। বিদেশী গণমাধ্যমে খবর এসেছে এক লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যারা সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেবে। আবার করিডোর দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গারা যুদ্ধ শুরু করলে দেশতো যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে। তখন নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া হবে’।

মুক্তিবাণী

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও