প্রতিদিন বিশ্বমাধ্যম খুললে চোখে পড়ে—গাজায় বোমা, ইয়েমেনে কামান, মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ, ভারতে দাঙ্গা, শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ চরমপন্থী হামলা, আফ্রিকায় গোত্রীয় সংঘর্ষ। সবখানেই ধর্মের নামে মানুষ মরছে, অথচ এর পেছনে সত্যিকারের চালক কে—এ প্রশ্নটিই চাপা পড়ে যায়।
________________________________________________________________________
রোহিঙ্গাদের ভূমিচ্যুতি: ‘শুধু বুদ্ধদের মায়ানমার’এক সময় আরাকান অঞ্চলে মুসলিম শাসকরা ক্ষমতায় ছিলেন। আজ সেই মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ বলে সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরা নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ আর উচ্ছেদ চালিয়েছে। জাতিসংঘ একে জাতিগত নিধন বলে অভিহিত করেছে। বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী আরাকান আর্মি-ও রোহিঙ্গাদের রাখাইন থেকে চিরতরে উৎখাত চায়
__________________________________________________________________________
ভারতের হিন্দুত্ববাদ: মুসলিমশূন্য রাষ্ট্রের স্বপ্ন: ভারত এক সময় মুঘল থেকে শুরু করে মুসলিম শাসকদের অধীনে শাসিত হতো। অথচ আজকের শাসক দল বিজেপি হিন্দু রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্নে মুসলিমদের কোণঠাসা করছে।বাবরি মসজিদ ধ্বংস, CAA, NRC, দাঙ্গা, গরু রক্ষার নামে গণপিটুনি—সবই এক সুদূরপ্রসারী হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডার অংশ বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।__________________________________________________________________________
ইসরায়েলি নীতি: শুধু ইহুদিদের রাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী থেকে ধর্মীয় নেতারা বারবার বলেছেন—“ইসরায়েল ইহুদি রাষ্ট্র, এখানে আরবি বা মুসলিম পরিচয়ের কোনো জায়গা নেই। ”ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উচ্ছেদ, গাজা স্ট্রিপের অবরোধ, ওয়েস্ট ব্যাংকে বসতি সম্প্রসারণ—সবই একই লক্ষ্য পূরণে ধারাবাহিক পদক্ষেপ।________________________________________________________________________
মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত: ধর্ম নয়, তেল আর করিডরের জন্য যুদ্ধ। SIPRI-র তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালে বিশ্ব সামরিক ব্যয় ২.২৪ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এই অর্থের বড় অংশই যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত আর অস্ত্র আমদানিতে। ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন—সবখানেই তেল ও গ্যাসক্ষেত্র দখলের লড়াইকে ধর্মীয় বিভাজন দিয়ে ঢেকে রাখা হচ্ছে।__________________________________________________________________________
বিশ্বজুড়ে জঙ্গি ফ্যাক্টর: অর্থ আর ভয় আইএস, আল-কায়েদা, বোকো হারাম, হামাস, হিজবুল্লাহ—সব গোষ্ঠীই ধর্মের নামে চললেও অর্থ আসে চাঁদাবাজি, তেল চোরাচালান, অপহরণ, বিদেশি পৃষ্ঠপোষকতা আর অস্ত্র চোরাকারবার থেকে। ধর্ম এখানে শুধু মানুষের আবেগ কাজে লাগানোর মোড়ক।__________________________________________________________________________
বিশ্লেষণ: বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরামের মহাসচিব ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক খায়রুজ্জামান কামাল বলেন,“রোহিঙ্গা থেকে গাজা—সবখানেই লক্ষ্য একটাই, ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার। ধর্মের নামটুকু শুধু আবরণ।”
সিনিয়র সাংবাদিক এস এম মেহেদী হাসান বলেন,“এক সময় মুসলিমরা শাসক ছিল—আজ সেই ইতিহাসই তাদের বিপরীতে ব্যবহৃত হচ্ছে। ধর্ম এখন বাণিজ্যিক যুদ্ধের মুখোশ।”
শেখ বাড়ী মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মুফতি তোফায়েল খাঁন বলেন, “ইসলামসহ কোনো ধর্মই নিরপরাধ মানুষ হত্যাকে সমর্থন করে না। যারা ধর্মের নামে সহিংসতা চালায়, তারা আসলে ধর্মের শিক্ষাকেই অবমাননা করে।” ইসলাম ধর্ম একমাত্র শান্তির ধর্ম। পবিত্র কোনআন মজিদ এর অর্থ বুঝে কেউ যদি পড়ে, সে কখনও দুনিয়ার লোভ লালসায় পড়বে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ হোসেন বলেন,“যুদ্ধের মূল চাবিকাঠি হলো জ্বালানি, করিডর আর বাণিজ্যিক রুট। ধর্ম মানুষকে বিভক্ত রাখার হাতিয়ার মাত্র।”
অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমদ মম বলেন,“রোহিঙ্গা থেকে ফিলিস্তিন—সবক্ষেত্রেই মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইন বারবার লঙ্ঘিত হচ্ছে, অথচ বিচার ব্যর্থ।”
ন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. উইলিয়াম হার্ডিং (Chatham House) বলেন,“ধর্মীয় পরিচয় যুদ্ধের অস্ত্র। আসল খেলা অর্থ আর ক্ষমতা।”
__________________________________________________________________________
উপসংহার: মুসলিমশূন্য রাষ্ট্রের স্বপ্ন, সম্পদের নিয়ন্ত্রণ আর ভূ-রাজনীতির সমীকরণে কোটি কোটি ডলার উড়ে যাচ্ছে ধ্বংসে—শান্তিতে নয়। ধর্মের নামে রক্তের হোলি খেলা বন্ধ করতে হলে অস্ত্র বাণিজ্য আর সাম্রাজ্যবাদী এজেন্ডার মূলে আঘাত করতে হবে। নইলে মানবসভ্যতার ইতিহাসে এই লজ্জার পুনরাবৃত্তি চলতেই থাকবে।
পাঠকের মন্তব্য