মাহে রমজানের ২১তম তারাবিহ নামাজে ২১তম পারার তেলাওয়াত করা হয়। এই পারায় পবিত্র কুরআনের সূরা আল-আনকাবুত (২৯তম সূরা) থেকে শুরু হয়ে সূরা আর-রুম (৩০তম সূরা) পর্যন্ত রয়েছে। এই সূরাগুলোতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। নিচে এই পারার সারসংক্ষেপ দেওয়া হলো:
১. সূরা আল-আনকাবুত (২৯তম সূরা): এই সূরায় ঈমান, পরীক্ষা, এবং ধৈর্যের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা মানুষের ঈমান পরীক্ষা করেন এবং যারা ধৈর্য ধারণ করে তাদের পুরস্কৃত করেন।
* সূরায় নবী ইব্রাহিম (আ.)-এর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি তাঁর সম্প্রদায়কে মূর্তিপূজা ত্যাগ করে এক আল্লাহর ইবাদত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
* সূরার শেষে আল্লাহ তা’আলা মানুষের সৃষ্টি এবং প্রাকৃতিক নিদর্শনগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, যা তাঁর মহিমা ও ক্ষমতার প্রমাণ।
২. সূরা আর-রুম (৩০তম সূরা): এই সূরায় রোমান ও পারস্য সাম্রাজ্যের মধ্যে যুদ্ধের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে এবং মুমিনদেরকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে আল্লাহ তা’আলা তাদের বিজয় দান করবেন।
* সূরায় আল্লাহর একত্ববাদ এবং কিয়ামতের দিনের প্রতি বিশ্বাসের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
* মানুষের সৃষ্টি, বিবাহ, এবং প্রকৃতির নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর মহিমা প্রকাশিত হয়।
* সূরার শেষে মানুষকে আল্লাহর পথে দৃঢ়ভাবে চলার এবং তাঁর নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই পারায় ঈমান, পরীক্ষা, ধৈর্য, আল্লাহর একত্ববাদ, এবং কিয়ামতের দিনের প্রতি বিশ্বাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে। এই সূরাগুলো মুমিনদেরকে আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখতে এবং তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করতে উৎসাহিত করে।
শবেকদর (লাইলাতুল কদর) ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত, যা রমজান মাসের শেষ দশকে পাওয়া যায়। এই রাতটি ইবাদত ও প্রার্থনার জন্য বিশেষভাবে মূল্যবান। রোজাদার ব্যক্তিরা শবেকদর পাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত কাজগুলো করা উচিত:
১. ইবাদত ও প্রার্থনা: সালাত আদায় করা : বিশেষ করে তাহাজ্জুদ এর সালাত আদায় করা। এই রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া উচিত।
কুরআন তিলাওয়াত: কুরআন তিলাওয়াত করা এই রাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল। সম্ভব হলে পুরো কুরআন খতম করা বা সূরা কদর ও অন্যান্য সূরা তিলাওয়াত করা।
দোয়া ও জিকির: আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, দোয়া করা এবং জিকির (আল্লাহর স্মরণ) করা। বিশেষ করে এই দোয়াটি বেশি পড়া:
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
(হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে পছন্দ করেন, তাই আমাকে ক্ষমা করুন।)
২. রাত জাগরণ: শবেকদরের রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করা। এই রাতটি ইবাদতের মাধ্যমে কাটানো উচিত।
৩. সদকা ও দান: এই রাতে সদকা দেওয়া বা দান-খয়রাত করা। গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা।
৪. অনুশোচনা ও তওবা: অতীতের গুনাহের জন্য অনুশোচনা করা এবং আল্লাহর কাছে তওবা করা। এই রাতটি ক্ষমা লাভের জন্য বিশেষ সুযোগ।
৫. সামাজিক ও পারিবারিক ইবাদত: পরিবার ও বন্ধুদের সাথে ইবাদত করা, কুরআন তিলাওয়াত করা এবং ধর্মীয় আলোচনা করা।
৬. শবেকদর খোঁজা: শবেকদর সাধারণত রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে (২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯তম রাত) পাওয়া যায়। তাই এই রাতগুলোতে বেশি ইবাদত করা উচিত।
৭. আত্মসমালোচনা ও আত্মউন্নয়ন: এই রাতে নিজের জীবনের দিকে তাকিয়ে আত্মসমালোচনা করা এবং ভবিষ্যতে কীভাবে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায় তা চিন্তা করা।
শবেকদর হলো আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের একটি মহাসুযোগ। তাই এই রাতটি ইবাদত, দোয়া ও প্রার্থনার মাধ্যমে কাটানো উচিত।
সর্বশেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫, ০০:৫২
পাঠকের মন্তব্য