মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় দুটি মন্দিরে সংঘটিত চুরির ঘটনায় পুলিশের তৎপরতায় গ্রেফতার হয়েছে ৬ পেশাদার চোর। উদ্ধার করা হয়েছে মন্দির থেকে চুরি হওয়া স্বর্ণালংকার, পিতল ও কাসার তৈরি ৩২টি পূজার সামগ্রী এবং চুরির সরঞ্জাম। পুলিশের দাবি, গোপন সূত্র ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অভিযান চালিয়ে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ঘটনায় কোনো সাম্প্রদায়িক উসকানি নেই বলে উল্লেখ করেছেন পুলিশ উচ্চপদস্থরা।
ঘটনার বিবরণ: ১. চুরির ঘটনা ও তদন্ত সূচনা:
• প্রথম ঘটনা: গত ১২ জুন রাত থেকে ১৩ জুন ভোরের মধ্যে পাখিয়ালা গ্রামের শ্রী শ্রী উদ্ধব ঠাকুরের আখড়া মন্দিরে চুরি হয়। চোরেরা দরজার কড়া ভেঙে স্বর্ণালংকারসহ ৪.৬৮ লাখ টাকার মালামাল (৩টি স্বর্ণের চূড়া, ২টি বাঁশি, ৩টি নূপুর, হার, লকেট, পিতলের মূর্তি, কাসার ঘণ্টা ইত্যাদি) লুট করে ।
• দ্বিতীয় ঘটনা: ২৬-২৭ জুন রাতে দক্ষিণভাগ সার্বজনীন দেবস্থলী মন্দিরে একই পদ্ধতিতে চুরি ।
• মামলা দায়ের: দুটি ঘটনায় বড়লেখা থানায় পৃথক মামলা রুজু হয়।
২. তদন্ত ও অভিযানের কৌশল: • গোপন তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার: সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং গোপন সূত্রের ভিত্তিতে তদন্ত চালায় মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) ও বড়লেখা থানার ওসি-এর নেতৃত্বাধীন টিম।
গ্রেফতারি অভিযান: • প্রথমে দক্ষিণভাগ রেললাইন এলাকা থেকে রুহেল আহমদ (৩০) কে আটক করা হয়।
• তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে **আবু তায়েব আহমদ সাজু (২৮), নুর হোসেন (৪০), জাকির হোসেন (৩১), মোঃ আলাল মিয়া (৩৮) ও শাহ আলী (৪২) কে গ্রেফতার করা হয় ।
৩. উদ্ধারকৃত মালামাল ও সরঞ্জাম: • পূজাসামগ্রী: ১১টি পিতলের ঘট, ২টি কাসার ঘণ্টা, ২টি পুষ্প থালি, ৮টি কাসার থালা, ৫টি কাসার বাটি, ১টি পিতলের প্রদীপ, ২ সেট চিপ কোষা ও ১টি পিতলের কলসি।
• চুরির সরঞ্জাম: কাটার, হেক্সো ব্লেড, হাতুড়ি, রডের টুকরা ও লাল রঙের জগ।
• মালামাল সনাক্তকরণ: মন্দির কর্তৃপক্ষ উদ্ধারকৃত জিনিসপত্র শনাক্ত করেছেন।
৪. আসামিদের প্রোফাইল: •গ্রেফতারকৃতরা পেশাদার চোর চক্রের সদস্য।
• তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
• চুরির মালামাল লুকানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল শাহ আলীর ভাঙারির দোকান (বড়লেখার মাধবগুল এলাকা)।
পুলিশের বক্তব্য ও সংবাদ সম্মেলন: অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নোবেল চাকমা ২৮ জুন শনিবার মৌলভীবাজার পুলিশ সুপারের কার্যালয় সংবাদ সম্মেলনে জানান:
• “এটি নিছক অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত চুরি; সাম্প্রদায়িক উসকানির কোনো প্রমাণ মেলেনি”।
• তদন্তের সাফল্যের কারণ: গোপন তথ্য, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতা।
• উদ্ধারকৃত মালামাল আদালতের মাধ্যমে মন্দির কর্তৃপক্ষকে ফেরত দেওয়া হবে ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য: • স্থানীয় প্রতিক্রিয়া: মন্দিরের সেবায়েত সমীরণ চন্দ্র দাস আগের চুরির পর থেকেই নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলেন ।
• অভিযোগের ইতিহাস: ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বড়লেখার কালীবাড়ি মন্দিরে চুরির ঘটনায়ও একই রকম পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছিল ।
শেষ প্যারা: মন্দির চুরির মতো সংবেদনশীল অপরাধ দ্রুত উদঘাটন করে মৌলভীবাজার পুলিশ প্রশাসন স্থানীয় সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জন করেছে। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এবং চোরাচালান রোধে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এই অভিযান শুধু অপরাধ দমনের ক্ষেত্রেই নয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা হিসেবেও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
> “ধর্মীয় স্থানের নিরাপত্তা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের অঙ্গ; চুরির ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ সেই দায়বদ্ধতারই প্রতিফলন”— অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নোবেল চাকমা ।
পাঠকের মন্তব্য