বিবেকে আঘাত লেগেছে, ফাঁসির দাবি শতকন্ঠে: শফিকুর রহমানের সমবেদনায় আনজুম বাড়ি

বিশেষ প্রতিবেদকঃ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ২৭জুন শুক্রবার সকাল ১১ টায় মৌলভীবাজারে কুলাউড়ার শেরপুর গ্রামে হত্যাকাণ্ডের শিকার স্কুলছাত্রী নাফিজা জান্নাত আনজুমের পরিবারের সাথে দেখা করে মর্মান্তিক এই ঘটনায় “বিবেকে আঘাত” লেগেছে বলে জানান। শতাধিক প্রতিবাদী জনতার উপস্থিতিতে তিনি খুনিদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন এবং “আনজুম হত্যাকারীর ফাঁসি চাই” বলে উত্তাল শ্লোগান ওঠে এলাকাজুড়ে ।

ছবি মুক্তিবাণীকেন এলেন শফিকুর রহমান? দুটি কারণ : আনজুমের কবর জিয়ারত ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সাথে সরাসরি কথা বলার জন্য তিনি বাড়িতে আসেন। মেয়েটির বাবার বর্ণনায় তার বিবেকে আঘাত লাগে এবং তিনি প্রশ্ন তোলেন—“এ নির্মম হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে আমরা কোন সমাজে বাস করছি?”

পরিবারের ওপর জুলুম : “নিষ্পাপ মেয়েটিকে হত্যা করে তার পরিবারের ওপর যে জুলুম করা হলো, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না,” বলতে গিয়ে তার কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে ।

ছবি মুক্তিবাণী

প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি: শফিকুর রহমান অভিযোগ করেন, মামলাটি প্রভাবিত করার চেষ্টা  চলছে এবং একটি প্রভাবশালী মহল জালিমের পক্ষ নিয়েছে। এ অবস্থায় তিনি ঘোষণা দেন: “আপনাদের নিয়ে আমরা জালেমের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলব ইনশাআল্লাহ। স্থানীয় প্রশাসনকে স্পষ্ট বলে দিয়েছি—খুনিকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তা সহ্য করা হবে না। পুলিশের কলম যেন ন্যায়ের পক্ষে থাকে। তদন্তকারী কর্মকর্তা যেন কোনো গড়বড় না করেন”

ছবি মুক্তিবাণী

যা ঘটল আনজুমের বাড়িতে:

• জনতার ক্ষোভ : বাড়ির আঙিনা লোকারণ্য। শত শত মানুষ ফাঁসির দাবিতে শ্লোগান দেয়। শফিকুর রহমান তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন ।

• পরিবারের আকুতি : পর্দার আড়াল থেকে আনজুমের মা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন,“মেয়ের হত্যাকারীর বিচার চাই”। শিশু ভাইবোনদের কোলেও শান্তনার হাত রাখেন শফিকুর ।

ধর্মীয় সমাধি : পার্শ্ববর্তী দাউদপুর জামে মসজিদের পাশের কবরস্থানে তিনি আনজুমের কবর জিয়ারত করেন এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন ।

যারা ছিলেন সাথে: জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জেলা আমির ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলী, জেলা সেক্রেটারি মো. ইয়ামীর আলী, ছাত্রশিবির নেতাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ধর্মীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন । স্থানীয় নেতাদের বক্তব্যে খুনিদের দ্রুত শাস্তির দাবি পুনর্ব্যক্ত হয়।

ছবি মুক্তিবাণী

রাজনীতি নয়, আজ শুধু মানবতা: সাংবাদিকরা যখন রাজনৈতিক ইস্যুতে প্রশ্ন করলেন, শফিকুর রহমান ক্লান্ত কণ্ঠে বলেন, “আজ আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত… এই মেয়েটি যদি আমার মেয়ে হতো? আজ কোনো রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি না”। তার এই মন্তব্য পরিবারের শোকের গভীরতার প্রতি শ্রদ্ধাই জানায়।

পটভূমি: ২৭ জুন সকালে তিনি প্রথমে মৌলভীবাজার শহরে জামায়াতের সাবেক নেতা দেওয়ান সিরাজুল ইসলামের কবর জিয়ারত করেন, এরপর কুলাউড়ায় আনজুমের বাড়ি যান । গত কয়েকদিনে তিনি একাধিকবার “ফ্যাসিবাদের জন্ম দেবেন না” বলে আগামীর রাজনীতির প্রতি সতর্ক করেছেন , কিন্তু আনজুম হত্যাকাণ্ড তাকে আজ সম্পূর্ণ মানবিক রূপে প্রকাশ করেছে।

মর্মার্থ: একটি নিষ্পাপ প্রাণের নির্মম বিদায় শুধু একটি পরিবারকে নয়, সমগ্র সমাজকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। ন্যায়বিচারই এখন শোকস্তব্ধ গ্রামের একমাত্র প্রত্যাশা।

মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও