“খরার বুকে নীল বিপ্লব! সেনা সদস্যের মাছ চাষে প্রযুক্তির জয়”

বিশেষ প্রতিবেদকঃ

পিকেএসএফ ও হীড বাংলাদেশের সহায়তায় যান্ত্রিক সেচে উৎপাদন দ্বিগুণ, সৃষ্টি হয়েছে স্থায়ী কর্মসংস্থান  

ছবি মুক্তিবাণী

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মঙ্গলপুর গ্রাম। এখানকার এক সময়ের অনুর্বর, পানিশূন্য জমি আজ হয়ে উঠেছে আধুনিক মাছ চাষের প্রাণকেন্দ্র। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য জনাব মোঃ আব্দুর রবের অদম্য প্রচেষ্টা আর প্রযুক্তির সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক বিস্ময়কর সাফল্যের গল্প। ৩০০ শতাংশ জমির উপর গড়ে তোলা ১০টি পুকুরে তিনি এবার জয় করেছেন দীর্ঘস্থায়ী খরাকে!

ছবি মুক্তিবাণী

পানির সংকট থেকে প্রযুক্তির জয়গান: দীর্ঘদিন ধরে আব্দুর রবের প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল পানির অপ্রতুলতা। বছরে মাত্র ৬ মাস মাছ চাষ করা সম্ভব হতো, ফলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদন আটকে ছিল মাত্র ৬.৫ মেট্রিক টনে। কিন্তু ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও হীড বাংলাদেশ (কমলগঞ্জ শাখা)-এর যুগান্তকারী উদ্যোগে তাঁর খামারে চালু হয় “খরাপ্রবণ এলাকায় মৎস্য খামার যান্ত্রিকিকরণের সহায়ক সেচ ব্যবস্থা”।

ছবি মুক্তিবাণী

⚙️ প্রযুক্তির ম্যাজিকে কী বদল এলো?

সারা বছর পানি নিশ্চিত: অটোমেটেড পাম্প ও জলাধার ব্যবস্থার মাধ্যমে খরার মৌসুমেও পুকুরে পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ।

এরেশন টেকনোলজি: বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ।

ঘনত্ব বৃদ্ধি: উন্নত পানিপ্রবাহ ব্যবস্থাপনায় পুকুরে মাছের ঘনত্ব নিরাপদে বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।

ছবি মুক্তিবাণী

অভূতপূর্ব সাফল্যের হার: এই প্রযুক্তির ব্যবহারে আব্দুর রবের খামারে ঘটেছে চোখ ধাঁধানো পরিবর্তন:

• মাছের উৎপাদন বছরে ৬.৫ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে!  

আর্থিক আয়ে এসেছে ঊর্ধ্বগতি, স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বাড়ায় পুষ্টি চাহিদা পূরণ।

• খামারে তৈরি হয়েছে ১০-১২ জন স্থানীয় যুবকের স্থায়ী কর্মসংস্থান 

ছবি মুক্তিবাণী

সমাজের আলোকবর্তিকা: আব্দুর রব এখন শুধু উদ্যোক্তা নন, তিনি কমলগঞ্জের যুবক ও তরুণ মাছ চাষিদের জন্য পথিকৃৎ । তাঁর খামারে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকে শুরু করছেন আধুনিক পদ্ধতির পোনা ও মাছ চাষ। বিশেষ করে পোনা উৎপাদনে  তিনি হয়ে উঠেছেন উপজেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স।  

ছবি মুক্তিবাণী

আব্দুর রবের জবানিতে: > “সেনাবাহিনীতে দেশসেবা করেছি, এখন করছি গ্রামের উন্নয়ন। পিকেএসএফ ও হীড বাংলাদেশের সহযোগিতা না পেলে এই অঞ্চলে সারা বছর মাছ চাষ অসম্ভব ছিল। আজ আমার খামার শুধু আয়ের উৎস নয়, অনেক পরিবারের ভরসার জায়গা।”

ছবি মুক্তিবাণী

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: তিনি চান তাঁর এই সফল মডেলটি কমলগঞ্জের প্রতিটি খরাপ্রবণ এলাকায় ছড়িয়ে দিতে। ইতিমধ্যে স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও এনজিওদের সঙ্গে আলোচনা চলছে এই প্রযুক্তিভিত্তিক মাছ চাষ পদ্ধতি সার্বজনীন করার।

✍️ শেষ কথা: জনাব মোঃ আব্দুর রবের এই যুদ্ধ শুধু খরাকে জয় করার নয়, তা দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও অনিশ্চয়তার বিরুদ্ধেও এক বলিষ্ঠ বিজয়। তাঁর সাফল্য প্রমাণ করে— উদ্যোগ, সহযোগিতা ও আধুনিক প্রযুক্তি একত্রিত হলে বাংলাদেশের কোনো মাটিই আর “অনুর্বর” থাকে না!

মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও