সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে সীমান্ত নদী জাদুকাটা বালু মহাল ইজারা প্রদান কার্যক্রমকে বৈধ ঘোষণা করেছেন সুপ্রিম কোর্ট।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৫ সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল সুত্র জানান, উচ্চ আদালতের দেওয়া ওই রায়ের কপি এখনো জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে পৌঁছেনি।
এদিকে রায় প্রদানের পরও গত দুই বছর ধরে কমর্হীন হয়ে বসে থাকা সাধারণ শ্রমিকরা নদীতে কাজে নামতে পারছেন না।
রায়ের খবর জেলার তাহিরপুর,বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা সদরসহ আশপাশের জেলা ও বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে পড়লে সর্দারসহ লাখো কর্মহীন শ্রমিক পরিবারে আনন্দের জোয়ার বইতে শুরু করে।
মঙ্গলবার জেলার তাহিরপুর উপজেলার গড়কাটি গ্রামের শ্রমিক সোহেল, শফিক সর্দার,ঘাগড়ার শ্রমিক আনিসসহ একাধিক শ্রমিক ও সর্দার জানান, আইনি জটিলতার মুখে গত দুই বছর ধরে সরকারিভাবে জাদুকাটা নদী হতে ওপারের ঢলে ভেসে আসা বালু উত্তোলন বন্ধ। এতে আমাদের মতো লাখো শ্রমিক পরিবার করোনাকালীন সময়ে কর্মহীন হয়ে খেয়ে না খেয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছি। কিন্তু কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি, কোন সরকারি-বেসরকারি সহায়তাও পাইনি।
তারা আরো বলেন, সুপ্রিম কোর্টের দেয়া রায় জেলা প্রশাসন দ্রুত কার্যকর করলে আবারো নদী হতে বালু উত্তোলন করতে পারব। তাতে পরিবার নিয়ে দু’বেলা ডাল-ভাতের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচও যোগাতে পারব। স্কুল বন্ধ থাকায় অনেকেই বাড়িতে শিক্ষক রেখে তাদের বাচ্চাদের পড়াচ্ছেন। টাকার অভাবে আমরা তা পারছি না । এতে আমাদের সন্তানেরা সব ভুলে যাচ্ছে। সন্তানদের বই-খাতাও কিনে দেওয়ার সাধ্য নেই আমাদের। আবার বালু উত্তোলনের পথ খুললে এসব সমস্যার সমাধান হবে আমাদের।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ইজারাদার পক্ষের আইনজীবি জানান, চলতি বছরের ২৩ মার্চ সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে জাদুকাটা বালু মহাল ইজারা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মেসার্স নিলম এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স আজাদ হোসেন ভ্যাট ট্যাক্সসহ প্রায় ১০ কোটি টাকায় মহাল ইজারা প্রাপ্ত হয়ে নির্ধারিত ব্যাংকে সরকারি কোষাগারে ইজারা মূল্য জমা করেন।
অপরদিকে একটি মহল নিজেদের কব্জায় মহাল নিতে না পেরে শ্রমিকদের কর্মহীন করে সরকারের প্রতি শ্রমিক অসন্তোস সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। সরকারি রাজস্ব আয়ের পথ রুখতে হাইকোর্টে ইজারা কার্যক্রম বন্ধ করতে রিট দায়ের করেন।
এরপর নিলাম প্রাপ্ত ইজারাদারগণ স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে ফের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে পাল্টা রিট দায়ের করেন।
এ নিয়ে টানা কয়েকদিন জেলার তাহিরপুর সহ বিভিন্ন উপজেলার জাদুকাটা বালু মহাল খুলে দেয়ার দাবিতে কর্মহীন শ্রমিকরা মানববন্ধন, গণস্বাক্ষর আদায়, লাখো শ্রমিকের কর্মসংস্থানের দাবি জানায়।
পরবর্তীতে শ্রমিক ও জনস্বার্থের বিষয়টি আমলে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ জেলা প্রশাসনের দেওয়া ইজারা বন্দোবস্ত বৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন।
মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন,আমরা এখনো আদালতের রায়ের কপি হাতে পাইনি, রায়ের কপি পাওয়া মাত্র আদালতের নির্দেশনার আলোকে জাদুকাটা মহাল শ্রমিক পরিবার ও জনস্বার্থে খুলে দিতে যা যা করণীয় খুব শিগগিরই তা করা হবে।
পাঠকের মন্তব্য