কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক ডজন নারী শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়ন, বডি শেমিং, ভিডিও কলের মাধ্যমে হয়রানি ও মার্ক দেওয়ার প্রলোভনে কু-প্রস্তাবের অভিযোগ তুলেছেন। গত ২২ জুন বিভাগীয় সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিলের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিয়েছে [অধিকন্তু সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য]।
অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ:
১. পদ্ধতিগত হয়রানি :• ভিডিও কল ও হুমকি: একাধিক ছাত্রী জানান, ড. আজিজুল রাতের বেলা তাদের ভিডিও কল দিতেন। অডিওতে কথা বলতে চাইলে তিনি বলতেন, “ভিডিও কল ছাড়া কথা বলব না”। ভিডিও কল না ধরলে পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকি দিতেন [শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার]।
• অশালীন মন্তব্য : ক্লাসে নারী শিক্ষার্থীদের শারীরিক গঠন, ঋতুস্রাব চক্র (”ওভুলেশন টাইম”), এমনকি যৌন ইচ্ছা (”সেক্সুয়ালি ডিজায়ার”) সম্পর্কে লজ্জাজনক মন্তব্য করতেন। এক ছাত্রীর নাম ধরে বলেন, “এই সময় তুমি সাবধান থাকবা” [অভিযোগপত্রের বিবৃতি]।
২. শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব : • বিভাগের ট্যুরে এক ছাত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, “সাঁতার পারো কি?” এবং উত্তর শুনে বলেন, “তাহলে একসঙ্গে সাঁতার কাটতে পারব না”। ”ফ্রি মিক্সিং”-এর উপকারিতা, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের প্ররোচনা দিতেন এবং ছাত্রীদের রুমে আসার চেষ্টা করতেন [নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর বক্তব্য]।
৩. নম্বরের প্রলোভন ও ভয় : অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, রাজি হওয়া ছাত্রীদের সিজিপিএ বাড়িয়ে দেওয়া হত। যারা প্রতিবাদ করতেন, তাদের পরীক্ষায় ফেল করানো হত বা হুমকি দেওয়া হত। দীর্ঘদিন ধরে এই আচরণ চললেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতেন না [বিভাগের এক স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী]।
প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া: • অভিযুক্ত শিক্ষকের অবস্থান : ড. আজিজুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমি এই বিষয়ে মেন্টালি আপসেট আছি। কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না”।
• বিভাগীয় ব্যবস্থা : বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক ড. নাজমুল হুদা নিশ্চিত করেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে ড. আজিজুলকে অ্যাকাডেমিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
• বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলের নিষ্ক্রিয়তা : ইবির “যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল” গত সাড়ে তিন বছরে মাত্র একটি অভিযোগ পেয়েছে। কমিটির সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল স্বীকার করেন, “শিক্ষার্থীদের লজ্জা ও ভয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে” ।
ক্যাম্পাসে পদ্ধতিগত সংকট: • অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতার অপব্যবহার : বিভিন্ন বিভাগের ছাত্রীরা জানান, “সুন্দরী মেয়েদের টার্গেট করা” এবং “ব্রেস্টফিডিং শেখানোর অজুহাতে জড়িয়ে ধরা”-র মতো ঘটনা নিয়মিত ঘটে।
• দমনমূলক ব্যবস্থা : অভিযোগ দাতাদের পরিচয় গোপন রাখার ব্যবস্থা না থাকায় ভুক্তভোগীরা নীরব থাকেন। এক শিক্ষার্থীর মতে, “গোপন অভিযোগ চালু করলে অনেকের মুখোশ খুলে যাবে”।
• ঐতিহাসিক পটভূমি : ২০২৩ সালে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামকে ছাত্র হেনস্তা ও সমকামিতার অভিযোগে চাকরিচ্যুত করা হয়। একই বছর ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে ছাত্রলীগ নেত্রীরা গণরুমে নির্যাতন করে, যা জাতীয় স্তরে আলোড়ন তুলেছিল ।
বিশ্লেষণ: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির ঘটনা নতুন নয়, কিন্তু অভিযোগ প্রক্রিয়ার দুর্বলতা ও প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তাহীনতা সমস্যাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। যদিও ড. আজিজুলের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা আশাব্যঞ্জক, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই:
১. গোপন অভিযোগ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে,
২. যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল কে সক্রিয় ও স্বচ্ছ করতে হবে,
৩. নিয়মিত সচেতনতা কর্মশালা** আয়োজন করতে হবে।
“শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করতে পারলে সেল গঠনের উদ্দেশ্য সফল হবে,” বলেছেন ইবির এক সিনিয়র অধ্যাপক ।
পাঠকের মন্তব্য