জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪

ঢাকা দখলে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ

মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্স :

আওয়ামী লীগের ৩ সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের যৌথভাবে শান্তি সমাবেশকে কেন্দ্র করে মূলত ঢাকা দখলে রাখতে চায় দলটি। 

এ জন্য সব ধরনের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি সমাপ্ত করেছে আওয়ামী লীগ। আজ বৃহস্পতিবার বায়তুল মোকারামের দক্ষিণ গেটে সহযোগীদের ওই সমাবেশের অনুমতি চাওয়া হলেও সেখানে অনুমতি মেলেনি। সে ক্ষেত্রে রাজধানীর আগাঁরগাঁওয়ের পুরাতন বানিজ্য মেলার মাঠের জন্য অনুমতি মেলে তাদের। কিন্তু সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, ওই মাঠ সমাবেশের উপযোগী না হওয়ায় এক দিন পিছিয়ে আগামীকাল শুক্রবার সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, ওই সমাবেশে যত বেশি সম্ভব লোক জমায়েত করতে চায় আওয়ামী লীগ। এর বাইরে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পাড়ায় পাড়ায় মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সতর্ক অবস্থার থাকার নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে দলটি। এ জন্য দলীয় ঢাকার সংসদ সদস্যবৃন্দ ও মহানগর আওয়ামী লীগকে ভূমিকা রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, বিএনপিকে দলটির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমাবেশ না করে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার পরামর্শ দেয় পুলিশ। পরে বিএনপি সমাবেশ পিছিয়ে আগামীকাল করার সিদ্ধান্ত নেয়।

ইসলামী আন্দোলন দলটির প্রতিবাদ সমাবেশ দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে করবে বলে দলের পক্ষ থেকে জানিয়েছে। তবে দলটি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররামের উত্তর গেটে সমাবেশ করতে চেয়েছিল। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর সমাবেশ বায়তুল মোকাররাম দক্ষিণ গেটে না করে আগারগাঁওয়ের বানিজ্য মেলার মাঠের করতে অনুমতি দেয় পুলিশ। এর আগে বায়তুল মোকারাম দক্ষিণ গেটে সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম খেলার মাঠে অনুমতি চেয়েছিল আওয়ামী লীগের ওই ৩ সংগঠন কিন্তু সেখানে অনুমতি দিতে দেয় নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এর বাইরে গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চেও সমাবেশের আবেদন করা হয় ওই সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে। সেখানেও অনুমতি না মিললে আবারও রাজধানীর আগাঁরগাঁওয়ের পুরাতন বানিজ্য মেলার মাঠের জন্য ওই সংগঠনগুলো আবারও আবেদন করলে তাদের সেখানে অনুমতি দেওয়া হয়। তবে এর আগেই বায়তুল মোকাররাম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে মঞ্চ প্রস্তুত করে ওই সহযোগী সংগঠনগুলো। তবে সেখানে তাদের অনুমতি দেওয়া হয় নি। গতকাল বুধবার রাতে আগাঁরগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের ওই পুরাতন বানিজ্য মেলা মাঠ পরিদর্শনে যান আওয়ামী লীগের সংগঠনগুলোর নেতারা। এর পর সেখানে কিছু অসঙ্গতি পান তারা। যা ঠিক করতে এক দিন ডিএমপির কাছে সময় নেন তারা। এ বিষয়ে গতকাল রাতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকার পুরাতন বানিজ্য মেলার মাঠটি সমাবেশ করার উপযোগী না হওয়ায় ডিএমপির কাছে আমরা একদিন সময় চেয়েছি। আগামী শুক্রবার (আগামীকাল) বিকেল ৩টায় সমাবেশ সেখানে অনুষ্ঠিত হবে।

সমাবেশের আয়োজক আওয়ামী লীগের ৩ সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, ওই সমাবেশে ৩ লাখের মত তরুণদের একত্রিত করা চান তারা। যার অধিকাংশ তারা ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আসবে। এর বাইরে সারা দেশের অন্য জেলাগুলো থেকেই নেতা-কর্মীদের সমাগম ঘটাতে চায় আওয়ামী লীগের ওই সহযোগীরা। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে। গত সোমবার ওই যৌথ শান্তি সমাবেশ উপলক্ষ্যে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতারা। এ সময় বিএনপির সমাবেশের পাল্টা সমাবেশ করছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। রাজনৈতিক দল হিসেবে সহাবস্থানে থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করব।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার মঙ্গলবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সব সহযোগী সংগঠন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যৌথ মতবিনিময় সভার করে দলটি। সভায় রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এখন দলীয় সমাবেশগুলোতে বেশি বেশি জমায়েত করার নির্দেশনা দেওয়া হয় দলীয় নেতাদের। এর বাইরে বিএনপিসহ বিরোধী দলের চলমান আন্দোলন কিভাবে মোকাবেলা করা হবে সে বিষয়ে একটি ‘রোড ম্যাপ’ তৈরী করে আওয়ামী লীগ। ওই বৈঠক সূত্র আরো জানিয়েছে, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত ঢাকা দখলে রাখতে সব ধরনের ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে সতর্ক থাকতে বলা হয়। এ জন্য আগামী নির্বাচন পর্যন্ত স্বল্প নোটিশে নেতাদের রাজপথে রাখার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের সমাবেশের লোক সমাগম ওই ৩ সংগঠন মিলেই করবে। এ জন্য ওই সংগঠনগুলো থেকে ব্যাপক প্রস্তুনি নিয়ে রাখা হয়েছে। ওই সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার শেষবারের মত সভা করেছে ছাত্রলীগ। এর বাইরে যুবলীগ ঢাকায় আসনভিত্তিক সভা করেছে। তবে ওই সমাবেশের বাইরে বিএনপির কর্মসূচি মোকাবেলায় মহানগর ও ঢাকার বাইরের নেতাদেরও সতর্ক অবস্থানে রাখবে আওয়ামী লীগ। বিএনপি কোথাও কোন পিকেটিং করলে তাৎক্ষনিকভাবে সে বিষয়টি মোকাবেলা করতে তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ঢাকার বাইরে এমনভাবেই দলীয় নেতারা অবস্থান নিবে যাতে বিএনপি তাদের সমাবেশে অনেক বেশি লোক আনতে না পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সকলেই সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু পূর্বের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি বিএনপির সভা সমাবেশ মানেই মানুষের জান মালের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকে। আবারো তারা যদি সমাবেশের নামে এমন কর্মকান্ড করে তাহলে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদেরকে প্রতিহত করব। তবে আগ বাড়িয়ে আমরা কারো সঙ্গে দ্বন্দ্বে যাব না। মহানগরীর নেতা-কর্মীদের এ ধরনের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। প্রত্যেকটি পাড়ায় মহল্লায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আমরা সতর্ক পাহারা থাকবো।

ঢাকা মহানগর উত্তরের দপ্তর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সামদ্দার বাপ্পী বলেন, আমাদের ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের শান্তির সমাবেশ করেছেন। তবে সেখানে মহানগর আওয়ামী লীগের তরুণ নেতৃবৃন্দ যারা তারা অংশ নিতে পারেন। যেহেতু সমাবেশ রাজধানীতে হচ্ছে তাই মহানগরের নেতৃবৃন্দরাও তাদের ওয়ার্ডে পাড়ায় মহল্লায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে সতর্ক অবস্থানে থাকবেন। মহানগর থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গতকাল ছাত্রলীগের ওই সভা থেকে সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন যে, আগামীকালকে (আজ) ঢাকা শহরে বিএনপি-জামায়াত আবারও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা করবে। আমাদের কাছে সুস্পষ্টভাবে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের জানমালের ওপর আবারও আঘাত আসবে। শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন নিয়ে তারা ছিনিমিনি খেলতে চায়। এ জন্য আমরা যৌথসমাবেশে অংশ নেয়ার সিদ্ধন্ত নিয়েছি। বিএনপিকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেওয়া হবে না বলেও এ সময় উল্লেখ করেন তিনি।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির সঙ্গে আগে সংঘাতে না জড়াতে দলীয় নির্দেশনা রয়েছে। তবে যদি কোথায় বিএনপি সংঘাত করার চেষ্টা করলে তবে তা যথাসম্ভব মোকাবেলা করতে নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে দল। এ সময় আওয়ামী লীগকে পুলিশের সহায়ক ভূমিকা নিতে হবে।

গত শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করে বিএনপি। এর পরে যুবলীগ সূত্র জানিয়েছে, যুবলীগ গত সোমবার সমাবেশটি করতে চেয়েছিল। কিন্তু পরে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বড় আকারে ৩টি সংগঠন মিলে ওই সমাবেশ করা নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে আজ তারিখ নির্ধারণ করে আওয়ামী লীগের ৩টি সংগঠন।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, শুধু আজকের আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর সমাবেশ নয় আগামী আগস্ট জুড়েই বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি দিয়ে ঢাকা দখলে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। এ জন্য নির্দেশনা দেওয়া মাত্র লোক সমাগমের জন্য মহানগর আওয়ামী লীগকে নির্দেশনা দিয়ে রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৩, ০২:০৪
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও