জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪

সংবিধান অনুসারে নির্বাচনের পক্ষে আওয়ামী লীগ

মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্স :

ইতিমধ্যেই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বলছেন, চলতি মাসের ৬ তারিখ থেকেই দলের তৃণমূলের সঙ্গে ‘বিশেষ বর্ধিত সভা’ করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধান। আওয়ামী লীগ নেতারা আগাগোড়াই বলে আসছেন, সংবিধান অনুসারে নির্বাচন হবে। এ বিষয়ে অনড় মনোভাব দেখিয়ে আসছে দলটি। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তাদের নির্বাচন প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশের সর্বাতœক প্রচারণা শুরু করে দেবে দল। এর পর সময় যতই গড়াবে নির্বাচনমুখী হওয়া আরো বাড়তে থাকবে। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, সংবিধান অনুসারে যদি বিএনপি নির্বাচনে আসে তাহলে হয়তো নির্বাচনকালীন সরকারে হয়তো তাদের প্রতিনিধি রাখার বিষয়ে ভাবা হতে পারে।

সরকার পতনে বিএনপির এক দফা আন্দোলন চলমান রয়েছে। বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করবে না এমন সিদ্ধান্তে অটল। উল্টো দিকে আওয়ামী লীগও নির্বাচন করবেই। সেটা বিএনপিকে ছাড়া হলেও করবে। এমনটাই বলেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলছেন, নির্বাচন যথা সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাহলে তাদের জন্যই ভাল। আর না আসলেও ২০১৪ সালের মত নির্বাচন হবে। নির্বাচন কেউ ঠেকাতে পারবে না। আর যদি বিএনপি নির্বাচন ঠেকাতে আসে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। বিএনপিকে নির্বাচনে আসারও আহ্বান জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। আবার অনেকে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে পরিণতি দিয়েও কথা বলছেন।

গতকালও দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে উদ্দেশ্যে করে বলেছেন, হবে না, তত্বাবধায়ক হবে না, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন না, সংসদ ভাঙ্গবে না, স্বাধীন এ নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে, পছন্দ হলে নির্বাচনে আসুন, না হলে যা ইচ্ছা করুন। তবে আগুন নিয়ে খেললে খবর আছে। আগুন নিয়ে খেলতে আসবেন না, আগুন নিয়ে খেলতে আসলে প্রতিহত করা হবে, সমুচিত জবাব দেয়া হবে। ২০১৩-২০১৪ আর ২০২৩ সাল কিন্তু এক নয়। গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেই বিএনপির পতন হবে। তিনি আরো বলেছেন, বিএনপি এখন খাদের কিনারে।

গত মাসে আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলের নেতাদেরও সামনেও একই মনোভাব দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের কাছে আওয়ামী লীগ নমনীয় হবে না এমন মনোভাব দেখিয়ে তখন তিনি বলেছিলেন, যত চাপই আসুক তিনি নমনীয় হবেন না। সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোন নির্বাচন দেবেন না। যথাসময় নির্বাচন হবে। শেখ হাসিনা আরো বলেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে সরকার দৃঢ় থাকবে।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার ব্যস্ততা পরে গেছে। গত ঈদের সময় থেকেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও সংসদ সদস্যরা এলাকামুখী হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তারা জনগণের কাছে যেতে সরকারের গত ১৫ বছরের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে ভোট চাইছেন। জনগণকে আগামী নির্বাচনে উন্নয়নের পক্ষে রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ বিএনপির আন্দোলনণ অর্থ্যাৎ বিএনপি কি করে সে দিকে বিশেষ নজর রাখবেন। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করবেন। এ জন্য সারা দেশে সফর করে জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। সারা দেশে যার একটি চলতি মাসে রংপুরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। সারা দেশে আওয়ামী লীগ প্রধানের আরো জনসভা হবে, এর বাইরে নির্বাচনের ইশতেহার তৈরীসহ নির্বাচনী বিষয়াদী, প্রচারণা নিয়ে কাজ শরু করে দিয়েছে দলটি। গত ৬ আগস্ট দলের তৃণমূলের সঙ্গে বিশেষ বর্ধিত সভা করে মাঠে গিয়ে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে কাজ করার কড়া বার্তা দিয়ে রেখেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, দল নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।

গতকাল নির্বাচন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি জানে নির্বাচনে তাদের কি দশা হবে। এই মূহুর্তে নির্বাচন হলে এদেশের ৭০ ভাগ ভোট শেখ হাসিনাকে দেবে। যে কোনো সংকট কিংবা সমস্যায় শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখার প্রতি সারা দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।

আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে আওয়ামী লীগের ওপর এবার শুরু থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপী ইউনিয়নের দেশগুলোর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যহত আছে। সে বিষয়টি প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ নেতারা না স্বীকার করলেও দলটির ওপর যে চাপ আছে সেটা নিয়ে কথা বলছেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে তারা আসলে নিজেরাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা বিষয়টি নিয়ে নিজেরাই চাপ অনুভব করেন। চলতি মাসের শুরুতেই আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। পরে দলটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ বিদেশিদের কোনো চাপ অনুভব করছে না। তবে নিজেদের বিবেকের চাপ অনুভব করছে।

সম্প্রতি চীন সফর করে এসেছেন আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলের তিন নেতা। সফর করে ফিরে জোটের বৈঠকে চীন আওয়ামী লীগ সরকারের পাশে রয়েছে বলে আলোচনা করেছেন। তাদের মধ্যে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া সফরের আলোচনা সম্পর্কে গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের মূল কথা ছিল, সরকারের ধারাবাহিকতা দরকার। চীনা নেতারাও মনে করেন, বাংলাদেশে সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি আরও বহুলাংশে বেড়ে যাবে। তাই চীন বাংলাদেশের টেকসই অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।

সম্প্রতি ভারত সফর করে এসেছেন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। দলটি সে দেশের ক্ষমতাশীন দল বিজেপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দেশে ফিরে আওয়ামী লীগ নেতাদের মনোভাব হলো এবারও ভারত তাদের পাশে থাকবে। যদিও ভারত এ বিষয়ে যে কিছুই বলেনি সেটা আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যেও উঠে এসেছে। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, ভারত বিশ্বাস করে বাংলাদেশে সংবিধান অনুসারে নির্বাচন হবে। ওই সফর শেষে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সদস্য ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ভারত ধৃঢভাবে বিশ্বাস করে যে, বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে যে নির্বাচন হবে সেটি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। এ জন্য এখানে অন্য যে দাবি আছে তার কোন প্রয়োজন নেই। এটা তারা বুঝে। তারা মনে করে, সংবিধান আলোকে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট বাংলাদেশ হবে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, বিএনপির আন্দোলন নিয়ন্ত্রণেই দলীয়ভাবে কর্মসূচি দেবে আওয়ামী লীগ। বিএনপি বড় কোন কর্মসূচি দিলেই আওয়ামী লীগও কর্মসূচি দেবে। তবে একে পাল্টা কর্মসূচি বলতে নারাজ দলটি। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ২০১৪-১৫ সালে বিএনপি যে জ্বালাও-পোড়াও করেছে এর পর দলটিকে আর বিশ্বাস করা যায় না। আওয়ামী লীগ মূলত জনগণের জান-মাল রক্ষায় কর্মসূচি দিয়েছে। একইভাবে বিএনপির যে কোন বড় কর্মসূচিতে সতর্ক অবস্থানে থেকে তার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলবে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিয়ে যাবে দলটির নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনের আবহ তৈরী করাও আওয়ামী লীগের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে বলে দলটির নেতা বলে আসছেন।

আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, তারা সঠিক কর্মসূচি নিয়েই মাঠে রয়েছেন। বিএনপির আন্দোলণ মোকাবেলায় তারা জনমত তৈরীও আগামী করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ বিগত দিনের বিএনপির জ্বালাও-পোড়াওয়ের প্রচার চালিয়ে ইতিমধ্যে দলটিতে একটি উল্টো চাপে রাখা যাবে। আর বিএনপি যদি এবারও আন্দোলনে সহিংতা করে তার জন্য বিদেশীদের উল্টো অভিযোগের সুযোগ তৈরী করে দিবে তারা। বিএনপির আন্দোলন যত সহিংস হবে ততই আওয়ামী লীগের জন্য আন্দোলন মোকাবেলা করা সহজতর হবে। এতে বিএনপির আন্দোলন জনসমর্থন হারাবে, আর আওয়ামী লীগের ভুলত্রুটিকে কেন্দ্র করে বিগত দিনে বিএনপি যতটুকু জনসমর্থন পাচ্ছিল সেটাও ফিকে হতে থাকবে। সংঘাত-সংঘর্ষ এড়াতে বিএনপির বিদেশি পরামর্শদাতাদের যে অবস্থান, সেখানে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে তাদেরই।

গত মাসে ছিল প্রধান দুই দলের বেশ কয়েকদিন পাল্টা কর্মসূচি। বিএনপির কর্মসূচির পাশাপাশা রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগও কর্মসূচি দিয়ে রেখেছিল। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, এতে আওয়ামী লীগের দুটি কাজ এক সঙ্গে হয়েছে সেটা হলো বিএনপির আন্দোলন যেমন তারা মাঠে থেকে মোকাবেলা করতে পেরেছে তেমনি নির্বাচনের আগে একটি ওয়ার্ম আপ হয়ে গেছে দলটির নেতা-কর্মীদের। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাতার নির্দেশনা দিয়ে আসছেন। গত ২৯ জুলাই বিএনপির নয়াপল্টনের সমাবেশের দিন আওয়ামী লীগের ৩ সহযোগী সংগঠনের শান্তি সমাবেশ ছিল বায়তুল মোকারাম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে। ওই সমাবেশসহ আরো কয়েকটি সমাবেশে আওয়ামী লীগ আসলে বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলার সঙ্গে দলের মধ্যে যে দ্বিধা- দ্বন্দ্ব রয়েছে তা উৎড়িয়ে যেতে চেয়েছে। টানা দলীয় কর্মসূচির কারণে দলের দ্বন্দ্ব ও সংঘাত কমবে বলেই দলটির নেতারা মনে করেন। আর আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেলে আওয়ামী লীগের দলীয় দ্বন্দ্ব আর থাকবে না। এ বিষয়টিও আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড, আব্দুর রাজ্জাকও এই মনোভাব ব্যক্ত করেন।

গত ৩০ জুন ঢাকার প্রবেশপথে বিএনপির কর্মসূচিতে সংহিসতার হলে এর জন্য বিএনপিকে দায়ী করে আওয়ামী লীগের নেতারা। বিএনপি আবার পূর্বের অবস্থানে ফিরে গেছে এমন বক্তব্যও দিতে থাকে দলটির নেতারা। গত ৩১ জুলাই সচিবালয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি দিয়ে ‘সহিংসতা’ করায় বিএনপির ওপর মার্কিন ভিসা নীতি ‘প্রয়োগ করা উচিত’।

সর্বশেষ আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২৩, ০১:১৭
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও