মাহে রমাদ্বানে ২৩তম তারাবিহর সালাতে ২৩তম পারার তেলাওয়াতের সারসংক্ষেপ

ছবি মুক্তিবাণী
ছবি মুক্তিবাণী
মুক্তিবাণী ইসলামিক ডেক্সঃ

মাহে রমজানের ২৩তম তারাবিহর সালাতে ২৩তম পারার তেলাওয়াত করা হয়। এই পারায় সুরা ইয়াসিন, সুরা সাফফাত, সুরা সাদ এবং সুরা জুমার অংশবিশেষ রয়েছে। এই সুরাগুলোতে তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত, আল্লাহর একত্ববাদ, নবীদের দাওয়াত, কিয়ামতের দিনের ঘটনা এবং মানুষের কর্মফল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

সুরা ইয়াসিন (৩৬তম সুরা): এই সুরায় কুরআনের মর্যাদা, নবীদের দাওয়াত, মানুষের অবাধ্যতা, আল্লাহর একত্ববাদ এবং আখিরাতের বিশ্বাস সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

√ মৃত্যু ও পুনরুত্থানের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে মানুষ সচেতন হয় এবং সঠিক পথে ফিরে আসে।

সুরা সাফফাত (৩৭তম সুরা): এই সুরায় ফেরেশতাদের দায়িত্ব, নবীদের সংগ্রাম, শিরকের বিপদ এবং আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি আহ্বান করা হয়েছে।

√ ইব্রাহিম (আঃ)-এর কুরবানির ঘটনা এবং আল্লাহর প্রতি তাঁর আনুগত্যের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে।

সুরা সাদ (৩৮তম সুরা): এই সুরায় দাউদ (আ.) এবং সুলাইমান (আঃ)-এর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে, যাতে আল্লাহর নেয়ামত এবং নবীদের দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

√ শয়তানের অবাধ্যতা এবং মানুষের জন্য এর শিক্ষা উল্লেখ করা হয়েছে।

সুরা জুমার (৩৯তম সুরা): এই সুরায় আল্লাহর একত্ববাদ, তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণ এবং শিরকের বিপদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

√ মৃত্যু ও পুনরুত্থানের বিষয়টি উল্লেখ করে মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে।

এই পারার তেলাওয়াতের মাধ্যমে মুমিনদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা আল্লাহর একত্ববাদ ও আখিরাতের প্রতি আরও বেশি সচেতন হয়। রমজান মাসে এই তেলাওয়াত মুমিনদের আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনে সাহায্য করে।

কোরআন মজিদের ২৩ নম্বর পারা (সূরা ইয়াসিনের শেষ অংশ থেকে সূরা সাফফাত পর্যন্ত) মুসলিম উম্মাহর জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা, শিক্ষা ও উপদেশ ধারণ করে। এই পারায় উল্লেখিত কিছু করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় নিম্নে আলোচনা করা হলো:

করণীয়:

১. তাওহীদের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখা: সূরা সাফফাতে আল্লাহর একত্ববাদ ও তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের কথা বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। মুসলিমদের উচিত তাওহীদের প্রতি অবিচল বিশ্বাস রাখা এবং শিরক থেকে দূরে থাকা।

২. আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস : এই পারায় আখিরাতের দিন, পুনরুত্থান ও হিসাব-নিকাশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুসলিমদের উচিত আখিরাতের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখা এবং এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।

৩. নবীদের আদর্শ অনুসরণ করা : এই পারায় বিভিন্ন নবীর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে, যেমন নূহ, ইব্রাহিম, মুসা, হারুন ও ইলিয়াস (আঃ)। তাদের ধৈর্য, ত্যাগ ও আল্লাহর পথে দাওয়াতের পদ্ধতি অনুসরণ করা মুসলিমদের কর্তব্য।

৪. আল্লাহর জিকির ও ইবাদত : সূরা সাফফাতে ফেরেশতাদের আল্লাহর তাসবিহ ও ইবাদতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুসলিমদের উচিত নিয়মিত আল্লাহর জিকির, নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য অর্জন করা।

৫. সত্যের দাওয়াত দেওয়া :  নবীদের মতো মুসলিমদেরও উচিত সত্যের দাওয়াত দেওয়া এবং মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করা।

বর্জনীয়:

১. শিরক ও কুফর থেকে দূরে থাকা : এই পারায় শিরক ও কুফরের ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুসলিমদের উচিত যেকোনো ধরনের শিরক ও কুফরি চিন্তা-চেতনা থেকে দূরে থাকা।

২. অহংকার ও গর্ব ত্যাগ করা : সূরা সাফফাতে ইবলিসের অহংকারের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে, যা তাকে অভিশপ্ত করে। মুসলিমদের উচিত অহংকার, গর্ব ও আত্মম্ভরিতা ত্যাগ করা।

৩. মিথ্যা ও অপবিত্র কাজ থেকে বিরত থাকা : এই পারায় মিথ্যা কথা, অপবিত্র কাজ ও অসত্যের বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয়েছে। মুসলিমদের উচিত যেকোনো ধরনের মিথ্যা, প্রতারণা ও অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকা।

৪. দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করা : এই পারায় দুনিয়ার মোহ ও ভোগ-বিলাসের প্রতি মোহগ্রস্ত হওয়ার বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। মুসলিমদের উচিত দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে আখিরাতের প্রস্তুতিতে মনোনিবেশ করা।

৫. নবীদের কথা অস্বীকার করা থেকে বিরত থাকা : এই পারায় যারা নবীদের কথা অস্বীকার করেছে তাদের ভয়াবহ পরিণতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। মুসলিমদের উচিত নবীদের শিক্ষা ও আদর্শকে সম্মান করা এবং তা মেনে চলা।

উপসংহার:

কোরআনের ২৩ নম্বর পারা মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি পথনির্দেশিকা। এতে তাওহীদ, আখিরাত, নবীদের আদর্শ ও ইবাদতের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি শিরক, অহংকার, মিথ্যা ও দুনিয়ার মোহ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুসলিমদের উচিত এই শিক্ষাগুলো অনুসরণ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।

সর্বশেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৫, ২৩:০০
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও