মঙ্গলবার (১লা এপ্রিল) বিকেলে কুলাউড়া, মৌলভীবাজার বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আয়োজনে কুলাউড়া উপজেলার ডাকবাংলা মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ঈদ পুনর্মিলনী সমাবেশ।
জেলার বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন সংগঠনের আমির ডা. শফিকুর রহমান। দীর্ঘ ২৪ বছর পর কুলাউড়ার মাটিতে পদার্পণ করে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে আজ আপনাদের মুখ দেখতে পেরেছি। আপনারা কীভাবে আছেন? আমার বিরুদ্ধে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা অভিযোগ এনেছিল কিছু মহল, কিন্তু আল্লাহর কৃপায় কুলাউড়ার মানুষ আমার বিপক্ষে সাক্ষ্য দেয়নি। এ জন্য আমি এ অঞ্চলের জনগণের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।”
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেন, জন্মস্থানের একটা মায়া একটা ভালোবাসা আছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর আপনাদের সামনে ২৪ বছর পর কথা বলার সুযোগ হয়েছে। কুলাউড়ার মানুষ যেভাবে চিনে অন্য কেউ সেভাবে চিনে না। আমি কি যুদ্ধাপরাধী? না- অথচ আমার উপর যুদ্ধপরাধের মামলা দেয়ার চেষ্টা করেছে। যুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিলো সাড়ে ১২ বছর। সাড়ে ১২ বছরের মানুষ যুদ্ধকালীন সময়ে মানুষ খুন করতে পারে- এটা বিশ্বাসযোগ্য কথা? চেষ্টা করা হয়েছে। কেউ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগও দেয়নি, সাক্ষ্যও দেয়নি। হিন্দু ভাইয়েরাও তাতে রাজি হয়নি। আমি সেই সময় জামায়াতে ইসলামী ও করতাম না। আমি অন্য একটা সংগঠন করতাম। যেটা বলতে এখন লজ্জা হয়।
আমির বলেন, বিগত জালিম সরকারের আমলে আমরা ১১ জন শীর্ষ নেতাকর্মীকে হারিয়েছি, ৫ শতাধিক মানুষ পঙ্গু হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ হামলা মামলার শিকার হয়ে দেশ ছেড়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। সাড়ে ১৩ বছর সারাদেশে দলীয় কার্যালয় সিলগালা করে বন্ধ রাখা হয়েছিল। জামায়াতের নিবন্ধনও কেড়ে নেওয়া হয়।
ছাত্রদের কোটা আন্দোলন দেশের সকল মানুষের আন্দোলন ছিল জানিয়ে আমির বলেন, এটা কোনো দলের বা কোন গোষ্ঠির আন্দোলন ছিলনা। ওই আন্দোলন ছিল দেশের সকল মানুষের আন্দোলন। এর কৃতিত্ব ছাত্রজনতার। বাংলাদেশকে আল্লাহ্ জালিমের কবল থেকে মুক্ত করেছেন। ফিলিস্তিনকেও যেন আল্লাহ্ জালিমের হামলা থেকে মুক্ত করে দেন এই প্রত্যাশা তিনি ব্যক্ত করেন।
সমাবেশে স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ হাজারো সমর্থক তার বক্তব্যে সাড়া দেন। ডা. রহমান তার ভাষণে দলীয় ঐক্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন। এ সময় উপস্থিত নেতারা বক্তব্যে জামায়াতের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও সমাজ সংস্কারে ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।
স্থানীয় একজন অংশগ্রহণকারী বলেন, “দীর্ঘদিন পর আমির সাহেবের সরব উপস্থিতি আমাদের মধ্যে নতুন আশা জাগিয়েছে।” অনুষ্ঠানটি কুলাউড়ায় জামায়াতের সংগঠনিক শক্তি ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার বার্তা দেয় বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
জামায়াত ইসলামীর এই সমাবেশে আমিরের আবেগঘন প্রত্যাবর্তন ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ মোকাবিলায় কুলাউড়াবাসীর ভূমিকা নতুন আলোচনার সূত্র তৈরি করেছে।
উপজেলা জামায়াতের আমির সহকারী অধ্যাপক আব্দুল মুন্তাজিমের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি বেলাল আহমদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরের আমির মো. ফখরুল ইসলাম, সিলেট জেলার আমির মো. হাবিবুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলার ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, সেক্রেটারি মো. ইয়ামীর আলী, জামায়াত মনোনীত মৌলভীবাজার জেলার সাবেক আমির সিরাজুল ইসলাম, মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুর রব, মৌলভীবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা আমিনুল ইসলাম, জামায়াতের ঢাকা পল্টনের আমির শাহীন আহমদ খান, মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. নিজামুদ্দিন, কুলাউড়া উপজেলা সভাপতি আতিকুর রহমান তারেক প্রমুখ।
পাঠকের মন্তব্য