মৌলভীবাজার শহরের সুনামধন্য “দি ফ্লাওয়ারস কেজি এন্ড হাই স্কুল” আজ অস্তিত্ব সংকটে। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যাপীঠ একসময় শহরের একমাত্র ইংলিশ-বাংলা ভার্সন স্কুল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলেও, বর্তমানে রাজনৈতিক দখলদারিত্ব, ভর্তিবাণিজ্য, তহবিল তসরুপ ও শিক্ষকদের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে ধ্বংসের মুখে। ২০১৬ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম ও সহকারী লোকমান আহমেদের দায়িত্বকালে স্কুলটি যুবলীগের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। গত এসএসসিতে ১৬ জন ফেল করার ঘটনা গোটা শহরে আলোচিত হলেও এখনও নেয়া হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।
প্রধান অভিযোগসমূহ: ১. দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়ম: • প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম সরকারি বেতনের পাশাপাশি স্কুল থেকেও মাসে ৪০ হাজার টাকা ভাতা নিচ্ছেন, যা একজন জেলা প্রশাসকের বেতনের চেয়েও বেশি!
• এমপিওভুক্ত শিক্ষকরাও “দ্বৈত বেতন” নিচ্ছেন, যা পুরনো শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের কারণ।
• তহবিল তসরুপ ও অডিট রিপোর্ট কারচুপির অভিযোগ।
২. রাজনৈতিক দখলদারিত্ব: • প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম (সাবেক ছাত্রলীগ নেতা) স্কুলে আওয়ামী লীগের নেতা নেছার আহমেদকে নিয়ে আসেন।
• স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি ও ক্যাম্পাস যুবলীগের অফিসে রূপান্তরিত।
• দলীয় নেতাদের “বখাটে সন্তানদের” টাকার বিনিময়ে ভর্তি করা হচ্ছে।
৩. শিক্ষার মান বিপর্যয়: • ২০০৪-২০১৬ সাল পর্যন্ত সরকারি বোর্ড পরীক্ষায় টপ র্যাঙ্কিং অর্জনকারী স্কুলটি এখন জেলার সর্বনিম্ন ফলাফলের প্রতিষ্ঠান।
• শিক্ষকদের অনৈক্য, প্রাইভেট কোচিং নির্ভরতা ও প্রশ্নফাঁসের সংস্কৃতি চালু হয়েছে।
• অভিভাবকদের অভিযোগ: “শিক্ষকরা ইচ্ছাকৃতভাবে কম মার্ক দেন, তবে পরিচয় গোপন রাখতে অনুরোধ করেন।”
৪. নৈতিক পতন: • প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষানুরাগী কমিটি (ডাঃ আব্দুল আহাদ, মোহাম্মদ ইউসুফ আলী) বাদ দিয়ে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকদের নিয়োগ।
• ছাত্রদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করলে লোকমান আহমেদ তাদের বাসায় গিয়ে “আকুতি-মিনতি” করেন।
অতীত গৌরব বনাম বর্তমান বাস্তবতা: • ১৯৮৯-২০১৬: শহরের প্রথম কেজি স্কুল; নামীদামী পরিবার, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সন্তানদের বিদ্যাপীঠ; বোর্ডে টপ র্যাঙ্কার।
• ২০১৬-বর্তমান: এসএসসিতে ব্যর্থতা, শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা, স্কুল ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সভা।
সমাধানের দাবি: • অবিলম্বে প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম ও সহকারী লোকমান আহমেদের অপসারণ।
• দুর্নীতি তদন্ত ও তহবিলের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ।
• শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন ম্যানেজিং কমিটি গঠন।
• শ্রেণীকক্ষের কার্যক্রমে নিয়মিত মনিটরিং।
শিক্ষকদের আকুতি: “আমাদের স্কুলের ছাত্ররা একদিন ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতো, বুয়েটে-চান্স পেত… আজ আমরা মাথায় কলঙ্কের তিলক নিয়ে ঘুরছি!” নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক তিন শিক্ষক।
“শহরের এই ঐতিহ্যের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারে এখনই জরুরি ভিত্তিতে এগিয়ে আসুন জেলা প্রশাসন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সচেতন নাগরিক সমাজ।”
পাঠকের মন্তব্য