উজান ঠেলেই নৌকা এগিয়ে যাবে স্যাংশনের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই :: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্স :

স্যাংশন ও আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিএনপির আন্দোলন দেখে ঘাবড়ে না যেতে নেতা-কর্মীদের আহ্বানও জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। উজান ঠেলেই নৌকা এগিয়ে যাবে এমন উল্লেখ করে কবির কবিতার মাধ্যমে তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আমি আপনাদেরকে বলতে চাই, আজকে যারা উপস্থিত সকলকে আমি বলবো, সেটা আমি কবির ভাষায় বলবো, মেঘ দেখে করিস নে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে, হারা শশীর হারা হাসি, অন্ধকারেই ফিরে আসে। গতকাল শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে সুধী সমাবেশে তিনি এমন কথা বলেন। এর আগে ঢাকার প্রথম দ্রুতগতির প্রথম উড়ালসড়ক ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত অংশ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে নাকি গণতন্ত্র চোখে দেখেন না, আর গণতন্ত্র উদ্ধার করবেন। যাদের জন্মই হচ্ছে অগণতান্ত্রিকভাবে, সংবিধান লঙ্ঘন করে। উচ্চ আদালত যাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ ঘোষণা করেছে, তাদের হাতে গড়া দল কি গণতন্ত্র দেবে। তারা তো গণতন্ত্র দিতে জানে না। তারপরও তারা আন্দোলনের নামে অনেক সময় অনেক কথা বলে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি আপনাদের একটা কথা বলবো, মাঝে মাঝে জানি আন্দোলন-সংগ্রাম দেখে অনেকে একটু ঘাবড়ে যান, তারপরে আবার স্যাংশন আসে, ভিসা স্যাংশন ইত্যাদি, ইত্যাদি। আমার স্পষ্ট কথা, এই মাটি আমাদের। আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, জাতির পিতার নেতৃত্বে। এ সমস্ত ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, বাংলাদেশের মানুষ জানে অধিকার আদায় করতে। তবে বাংলাদেশ তো ছয় ঋতুর দেশ, ছয় ঋতুর দেশে আমরা তো দেখি, কথনো বর্ষা, কখনো ঝড়, কখনো পূর্ণ জলোচ্ছ্বাস, কখনো রৌদ্দোজ্জল, আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেখে আমাদের অভিজ্ঞতা আছে, তাই আজকে যারা আন্দোলনের নামে রোজই ক্ষমতা থেকে আমাদের ফেলে দিচ্ছেন…। আমি আপনাদেরকে বলতে চাই, আজকে যারা উপস্থিত সকলকে আমি বলবো, সেটা আমি কবির ভাষায় বলবো, মেঘ দেখে করিস নে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে, হারা শশীর হারা হাসি, অন্ধকারেই ফিরে আসে।

আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই এমন উল্লেখ করে ‘মেঘ দেখে করিস নে ভয়’ এই কবিতার লাইনগুলোর বলার পর তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, মেঘের ঘনঘটা আমরা দেখি, তারপর তো সূর্য ওঠে। কাজের ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই। ভয়কে জয় করেই বাংলাদেশের জনগণ উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্যগতিতে এগিয়ে যাবে, নৌকা সারা জীবন উজান ঠেলে ঠেলেই এগিয়ে গেছে, ঝড়-ঝঞ্চা পারি দিয়েই নৌকা আজকে তীরে ঠেকেই জনগণের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। নৌকার মার্কা স্বাধীনতা দিয়েছে। নৌকা মার্কা অর্থণৈতিক উন্নতি দিয়েছে, নৌকা মার্কা ডিজিটাল বাংলাদেশ দিয়েছে, নৌকা মার্কাই স্মার্ট বাংলাদেশ আমাদের দেবে।

দেশের উন্নয়ন যে কারণে হয়েছে তারও কারণ ব্যাখ্যা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্রের উন্নয়ন হয়েছে একটাই কারণ, কারণ ২০০৯ সাল থেকে দেশে গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে, জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসে, একটি গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার পরিবেশ রাখতে পেরেছি। তার কারণেই আজকে বাংলাদেশের এই উন্নয়ন।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে সুধী সমাবেশে ব্যাপক জমায়েত করা হয়। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ, সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এতে যোগ দেন। সারা ঢাকা শহর থেকেই মিছিল সহকারে আগারগাঁওয়ের পুরাতন বানিজ্য মেলা মাঠে এসে জমায়েত হন। সুধী সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভাপতিত্ব করেন। সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন। এর আগে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ঘুরে দেখে আগারগাঁওয়ের পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে সুধী সমাবেশে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানাও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তারও আগে সকাল থেকেই সুধী সমাবেশে অংশ নিতে আগারগাঁওয়ের পুরোনো বাণিজ্য মেলা মাঠের দিকে আসতে থাকেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিছিল- স্লোগানে সুধী সমাবেশে যোগ দেন তাঁরা। বাস, ট্রাক ও ভ্যানে করে ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকেও নেতা-কর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন। দুপরের দিকেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীতে আগারগাঁওয়ের পুরাতন বাণিজ্যমেলা মাঠ ভরে যায়। শেরে-বাংলা-নগরের আওয়ামী লীগের কয়েকজন তৃণমূল নেতা বলেন, নিজের খেয়ে আওয়ামী লীগ করি। ঝড়-বৃষ্টি আমাদের কাছে কিছুই না। আজ রাজধানীবাসীর জন্য বড় একটি উপহার। যানজট আর মানুষের ভোগান্তি দূর হবে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে।

নিজ বক্তব্যে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি ও চলমান অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ইঙ্গিত করে একে ‘সাময়িক সমস্যা’ বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আজকে একটা সাময়িক সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমি আগেই বলেছি, এই ইউক্রেন যুদ্ধ আর রাশিয়ার এই ঘটনায় স্যাংশন- কাউন্টার স্যাংশনের জন্য, আমাদের উপর এই ধাক্কাটা এসেছে। কিন্তু আপনারা যদি একটু চিন্তা করে করে দেখেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯৬ এবং এর পর ২০০১ সালের পর থেকে ২০০৮ পর্যন্ত যে অন্ধকার যুগে বাংলাদেশ ছিল আজকে আর সেই অন্ধকার যুগে নেই। বাংলাদেশ এখন আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে। তিনি বলেন, কবি সুকান্তের ভাষায় বলতে চাই, যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে সরাবো জঞ্জাল, এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি। নবজাতকের কাছে এ আমার অঙ্গিকার।

শেখ হাসিনা বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে এয়ারপোর্ট, কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, ফার্মগেট, মগবাজার ও কমলাপুর এলাকার যানজট নিরসন করবে।

সুধী সমাবেশে বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজধানীর সঙ্গে সারা বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের একটি নতুন উপহার আজকে আপনাদের জন্য দিয়ে যাচ্ছি। যেটি যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাইলফলক। আজ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাওলার দক্ষিণ প্রান্ত থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করা হয়েছে। আপনাদের জন্য এই উপহার দিচ্ছি। তিনি বলেন, এটি ঢাকার যানজট নিরসনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এর মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতি হবে। মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে না।

সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৭৫ সাল থেকে ’৯৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশকে কিছুই দিতে পারেনি। নিজেদের আখের গুছিয়েছে। এদেশের মানুষের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার সুযোগ তারা দিতে পারেনি। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য তারা গড়তে চায়নি। স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্ব দরবারে দাঁড়াবে বাংলাদেশ, এটা কখনো তারা চায়নি।

উল্লেখ্য, ঢাকা এলিভেটেড এক্্রপ্রেসওয়ে আজ রোববার সকাল ছয়টা থেকে সাধারণ যানবাহন উড়ালসড়কে চলাচল করতে পারবে। আর তেজগাঁও থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত বাকি অংশ আগামী বছরের জুনে চালু করার লক্ষ্য ঠিক করছে সরকার।

সর্বশেষ আপডেট: ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:৪১
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও