মৌলভীবাজারে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে হট্টগোল

ছবি মুক্তিবাণী
ছবি মুক্তিবাণী
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি॥

একুশের প্রথম প্রহরে ভাষা শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে মৌলভীবাজার শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্থরের হাজারো মানুষের ঢল নামে। নানা শ্রেণী পেশার ও নানা বয়সের লোকজনের ফুল নিয়ে সরব উপস্থিতি প্রাণবন্ত হয়ে উঠে শহীদ মিনার। ফুল দেওয়ার আগমূহুর্তে শৃঙ্খলার নামে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়।

এসময় জেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে ব্যারিকেড নিয়ে পুলিশের সাথে বাকবিতন্ডা হয়। আগে কখনো এরকম ব্যারিকেড হয়নি নতুন করে কেনো এমন ব্যারিকেড দেওয়া হলো জানতে চাইলে অনেকটা উত্তেজনা কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ব্যারিকেড সরিয়ে নিতে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানানো হয়।

রাত ১২টা কিছু আগে শহীদ মিনারে কাছে আড়াআড়ি ভাবে অবস্থান নেয় জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধা, জেলা আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।

এ সময় ক্ষমতাসীন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নেছার আহমদ,জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান এর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ,যুবলীগ,ছাত্রলীগের কয়েকশত নেতা কর্মীকে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রাখে। এরই জের ধরে পুলিশের সাথে হট্টগোল শুরু হয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের। উপস্থিত কর্মীদের মধ্যে দেখা দেয় উত্তেজনা।

এসময় পাশেই অবস্থানকারী পুলিশ সুপার মোঃ মানজুর রহমানের কাছে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নেছার আহমদ ব্যারিকেড দেয়ার কারণ জানতে চান এবং ব্যারিকেড তুলে নেয়ার অনুরোধ করেন। শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার সময় আওয়ামী লীগের সামনে ব্যারিকেড দেওয়ায় পুলিশের এমন আচরণে হতবাক হন নেতাকর্মীরা।

এই পরিস্থিতিতে জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তখন তারা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিতে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম সকলকে শান্তিপূর্ণভাবে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে অনুরোধ জানান। পরে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ব্যারিকেড দেয়া নিয়ে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন সকলের শ্রদ্ধা জানানো শেষ হলে তারা শ্রদ্ধা জানাবেন।

সময়  তিনি দলের নেতা কর্মীদের নিয়ে কিছুটা পিছনে অবস্থান নেন। হট্টগোলের এক পর্যায়ে নির্ধারিত সময় রাত ১২টা ১ মিনিটে একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা প্রশাসনের পক্ষে জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম,মুক্তিযোদ্ধা সংসদ,জেলা পুলিশের পক্ষে পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান।

এর পর কিছু সময় শহীদ মিনারে ফুল দেয়া থেমে যায়। পরে শহীদ মিনারের পশ্চিম পাশ থেকে মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুর রহমানের প্রতিনিধি ফুলের তোড়া নিয়ে ও শহীদ মিনারের সম্মুখ থেকে ক্ষমতাসীন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে জেলা আওয়ামীলীগের কয়েকশত নেতাকর্মী শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। উল্লেখ্য এমপি জিল্লুর রহমান দেশের বাহিরে শ্রীলঙ্কা অবস্থান করছেন।

পরে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান, পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সম্পাদক মোঃ ফজলুর রহমান, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামীলীগ নেতা এম .এ রহিম (সি.আই.পি), জেলা বিএনপি, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ভিডিপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, বাসদ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডি, বিদুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ড, গণঃপুর্ত বিভাগ, সদর হাসপাতাল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন।

এবিষয়ে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আমিন চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশ এমন আচরণ করতে পারেনা। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে মৌলভীবাজার পুলিশ আচরণ আমরা হতবাক।

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নেছার আহমদ জানান, যে সব পুলিশ সদস্য ব্যারিকেড দিয়ে আমাদের সামনে হাতে হাত ধরে যারা দাঁড়িয়েছিল তাদের কোন দোষ ছিলনা। কি কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ভালো জানেন।

সুন্দর সুশৃঙ্খল ভাবে সবাই শহীদ মিনারে ফুল দিবেন এ বিষয়ে আমরাও দীর্ঘদিন থেকে সহযোগীতা করে আসছি। পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সম্পাদক মোঃ ফজলুর রহমান জানান, মৌলভীবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথমবার স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ব্যারিকেড দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পুলিশ। পরে অবশ্যই শান্তিপূর্ণভাবে আমরা ফুল দিয়েছি।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান জানান শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জাানাতে আসা সকলের জন্য জেলা পুলিশের পক্ষে একটি নিরাপত্তা বেষ্টনি দেয়া হয়েছিল। ওই নিরাপত্তা বেষ্টনি সব সময় ওইসব অনুষ্ঠানে থাকে। রাত ১২টা বাজার ১ মিনিট আগে ছেড়ে দেয়া হয়। নিরাপত্তার বাহিরে কোন কাজ করেনি পুলিশ। তবে কিারণে বাঁধার বিষয়টি এসেছে এটি খুঁজে দেখা হবে।

সর্বশেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১৫:৪১
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও