সাংবাদিক মুশফিকুল ফজলকে (আনসারি) অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। ইতোমধ্যে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে পদায়নের লক্ষ্যে তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সরকারি এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে দেখা গিয়েছে নেটিজেনদের। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘অন্য যেকোনো পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী তিন বছর মেয়াদে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপূর্বক বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনে রাষ্ট্রদূত হিসেবে পদায়নের নিমিত্তে তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হলো।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নিলুফা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, ‘এ নিয়োগের অন্যান্য শর্ত চুক্তিপত্র দ্বারা নির্ধারিত হবে।’
তবে কোন দেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে মুশফিকুল ফজলকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করার সরকারি সিদ্ধান্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বসে তিনি যেভাবে লড়াই চালিয়েছেন তাতে এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ তার প্রাপ্য।
পতিত শেখ হাসিনার পরের বছরের শাসনামলে মুশফিকুল ফজল আনসারী মার্কিন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মহলে এবং জাতিসংঘ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও গ্রহণযোগ্যতা থেকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদি সরকারের গুম, খুন, দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ দুঃশাসনের বিভিন্ন প্রমাণাদি উপস্থাপন করে যেভাবে শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে লড়ে গিয়েছেন এবং চাপের মধ্যে রেখেছেন তা এক কথায় অতুলনীয়। শুধু তাই নয়, ভয়-ভীতিসহ নানা ধরনের চাপের মুখে তাকে পথচ্যুত করতে না পেরে লোভ ও টোপ দিয়ে তাকে ফ্যাসিবাদী শাসনের পক্ষে কাজ করার জন্য অনেক চেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী দেশের স্বার্থে এসব ভয় ও লোভের বশবর্তী হননি। এক কথায় তিনি ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে যে সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন তা অতুলনীয়। সে কারণে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই রাষ্ট্রদূত করার দাবি জানিয়েছেন নেটিজেনরা।
ফেসবুকে কামাল উদ্দিন চৌধুরী নামে একজন লিখেছেন, ‘মুশফিকুল ফজল আনসারীকে যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিলে তিনি তার ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে কূটনৈতিক তৎপরতা গতিশীল করতে পারবেন’।
মামুন আহমেদ নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘প্রতিবাদী দুঃশাসনে আমরা প্রতি সপ্তাহেই অপেক্ষা করতাম কবে মুশফিকুল ফজল আনসারী হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র বা জাতিসংঘের মুখপাত্রের কাছে বাংলাদেশ সরকারের দুঃশাসন নিয়ে প্রশ্ন করেন এবং তার উত্তর তারা কী জানান তা জানতে। তার প্রশ্নে জাতিসংঘ ও মার্কিন কূটনীতিকদের রেসপন্স থেকে বোঝা যায়, তিনি ওসব জায়গায় অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিত্ব। কাজেই সেখানে তাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিলে তিনি দেশের পক্ষে বিপ্লবী ভূমিকা পালন করতে পারবেন’।
ফেসবুকে ইব্রাহিম খলিল লিখেছেন, ‘বর্তমানে যেভাবে সরকারের বিরুদ্ধে ভারত ষড়যন্ত্র করতে উঠেপড়ে লেগেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করছে সেই মুহূর্তে মুশফিকুল ফজল আনসারীকে যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলে তিনি তার গ্রহণযোগ্যতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে সক্ষম হবেন বলে আমার বিশ্বাস। কেননা মুশফিকুল ফজল আনসারীর চেতনা নিয়ে আমাদের কোনো দ্বিধা নেই’।
পাঠকের মন্তব্য