৮০ লাখ টাকার জেনারেটর ‘ঘুমিয়ে’, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলে রোগীদের মৃত্যুযন্ত্রণা!

বি-বাড়িয়া (নবীনগর) প্রতিনিধিঃ

ভূমিকা: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে কেনা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর গত এক বছর ধরে বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে। এর ফলে দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার সময় রোগীরা তীব্র গরমে ছটফট করেন, বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী ও মাতৃত্বকালীন মায়েরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১০০-১২০ জন রোগী ভর্তি থাকলেও জ্বালানি তেলের বরাদ্দ না থাকায় জেনারেটর চালানো সম্ভব হচ্ছে না ।

ঘটনার বিবরণ : - বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার ক্রাইসিস : ২৮ জুলাই নবীনগর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ৩৩ কেভি লাইনে সমস্যার কারণে উপজেলায় দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে। এ সময় হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছায়। রোগীরা হাতপাখা, কাগজ বা কাপড় দিয়ে বাতাস করার চেষ্টা করেন ।

- জেনারেটরের বেহাল দশা : ২০২৩ সালে ৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত নতুন ভবনের সঙ্গে এই জেনারেটর আনা হয়। প্রাথমিকভাবে সচল থাকলেও গত এক বছর ধরে তা অচল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, জ্বালানি তেলের সরকারি বরাদ্দ না থাকায় এটি চালানো যায় না ।  

- রোগীদের আর্তনাদ : ভর্তি এক রোগী জানান, “গরমে শিশুরা কাঁদতে থাকে, রাতে ঘুমানো অসম্ভব। আগে বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা কাজ করত, এখন কেন বন্ধ?” অন্য একজন স্বজন বলেন, “আমি নিজেই হাতপাখা দিয়ে ভাইকে বাতাস দিচ্ছি। জেনারেটরটা শুধু জায়গা দখল করে আছে”। 

কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া : - উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব চৌধুরী : “জেনারেটর চালাতে প্রতি মাসে ২-৩ লাখ টাকার ডিজেল লাগে। সরকারি তেল বরাদ্দ ছাড়া এটি সম্ভব নয়। বিকল্প হিসাবে আইপিএস (ইন্টারাপ্টিবল পাওয়ার সাপ্লাই) স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে” ।

- স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কিশলয় সাহা : “হাসপাতালে গড়ে ১২০ রোগী ভর্তি থাকেন। জ্বালানি সংকটের কারণে জেনারেটর চালানো যাচ্ছে না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে সমস্যার কথা জানানো হয়েছে”।  

পটভূমি: হাসপাতালের বর্তমান অবকাঠামো - ২০২৩ সালের জুনে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় নবীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এতে কার্ডিওলজি, প্রসূতি ও শিশু বিভাগসহ আধুনিক পরিষেবা চালু হয় ।

- উপজেলার ৪.২০ লাখ মানুষ (এবং পার্শ্ববর্তী রায়পুরার কিছু অংশ) এই হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল ।

- বর্তমানে ৩১ জন ডাক্তার ও ২৭ জন নার্স কর্মরত থাকলেও অবকাঠামোগত সংকটে সেবা ব্যাহত হচ্ছে ।

জনস্বার্থে জরুরি দাবি :

1. জেনারেটর চালু : অবিলম্বে জ্বালানি তেলের বরাদ্দ নিশ্চিত করে জেনারেটর সচল করা।

2. অবকাঠামো তদারকি : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে অবহেলার কারণ অনুসন্ধান।

3. দীর্ঘমেয়াদি সমাধান : হাসপাতালে সোলার প্যানেল বা স্থায়ী আইপিএস স্থাপন ।

উপসংহার :  নবীনগরের সাধারণ মানুষ প্রশ্ন করছেন: “৮০ লাখ টাকার জেনারেটর শুধু প্রদর্শনের জন্য কেনা হয়েছিল?” একটি জেনারেটর চালু রাখতে ব্যর্থ হয়ে রাষ্ট্র যেখানে জনস্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা দেখাচ্ছে, সেখানে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা কতটা বাস্তবসম্মত? । এই সংকট সমাধানে জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ জরুরি। নইলে “সবার জন্য স্বাস্থ্য” এর সরকারি প্রতিশ্রুতি আরেকটি মরীচিকা হয়ে থাকবে।

“জেনারেটর আছে, তেল নেই—এই বিড়ম্বনা যখন সরকারি হাসপাতালে, তখন সাধারণ মানুষের ভোগান্তি অবধারিত!”

মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও